ঢাকা: শিক্ষাকে দেশ ও বিদেশের কাছে অর্থবহ করার জন্য আউটকাম বেইজড এডুকেশন বা ফলনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটরিয়ামে ‘রাষ্ট্রনীতিতে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা ও দর্শনের প্রয়োগ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল।
ইউজিসি সদস্য ও ইআরডিএফবির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, দেশের কিছু কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অপব্যবহার করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে সরে আসছে। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার এবং গুণগত শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। ছাত্র, অভিভাবকসহ সমাজে প্রতিনিয়ত আমাদের এখন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কেন এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও শিক্ষার মান কেন এত পড়তির দিকে। অনেকেই এখন মহান শিক্ষা পেশায় আসছেন মানুষ গড়ার পরিবর্তে ধনী হওয়ার জন্য।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিক্ষার সার্বজনীন ও সহজলভ্যতা দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুশি হতেন। তবে আজকের শিক্ষার মান নিয়ে তিনি দুঃখ-কষ্ট পেতেন। শিক্ষায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে শিক্ষার মান।
সেমিনারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে ৫৪ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত হয়নি। অথচ তার সময়ে মাত্র ১/২ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পেতো বলে জানান।
কাজী শহীদুল্লাহ আরও বলেন, এখন ঘরে ঘরে জিপিএ-৫ বা টপার আছে। অথচ তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢালাওভাবে প্রফেসর সংখ্যা বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের মতো এত বেশি সংখ্যক বিভাগ ও সেন্টার নেই।
প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নিয়ে যা বলতেন, বিশ্বাস করতেন সেটি বাস্তবায়ন করতেন। পাকিস্তান সরকারের সময়ে উচ্চশিক্ষা ছিল সমাজের উচ্চশ্রেণির এবং শিক্ষায় জনসাধারণের তেমন সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম শিক্ষা সার্বজনীন ও সহজলভ্য করে দেন। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন আজ বাস্তবতা। শিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নারী শিক্ষার প্রসার হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে বেশি করে বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা এখন এতটা সহজলভ্য হয়েছে যে, কেউ স্কুলে যায় না সেটা খুঁজে বের করা কঠিন। কাউকে বলা লাগে না বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাও। বাড়ির পাশে স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা নিয়ে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও সচেতনতা তৈরির কারণে এমনটি হয়েছে।
অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞান, গণমুখী ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তার বিকাশ ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন—এই চেতনার আলোকে এবং বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সমসাময়িক বিষয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে ইআরডিএফবি যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ