ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি মধ্যরাতে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা এসে বাধা দেন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের অনুমতিতে মেট্রোরেলের কর্মীরা এটি মুছে ফেলার কাজ শুরু করেন। পরে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে মাঝপথে মোছার কাজ বন্ধ করা হয়।
মেট্রোরেলের রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন দুই পিলারের শেখ হাসিনা ও তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি আঁকে ছাত্রলীগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জনতা এই গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ, রক্তের প্রতীক স্বরূপ লাল রং, ইট-পাটকেল ও ঝাড়ু মেরে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। ফলে একসময়ের গ্রাফিতি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রতীকে রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন লোক মেট্রোরেলের পিলারে শেখ হাসিনার ছবি মুছতে গেলে তারা বাধা দেন। পরে তারা জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতিতেই এই কার্যক্রম চলছিল। এসময় একটি পিলারে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পূর্ণ ছবি অন্যটিতে শেখ হাসিনার ছবির মুখের অংশ মুছে ফেলা হয়।
তারা জানান, পরে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়ে মোছা বন্ধ করেন এবং পুনরায় শেখ হাসিনার ছবি এঁকে দেন। এরপর তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মেট্রোরেলের পিলার থেকে এই গ্রাফিতিটা গতকাল গভীররাতে মুছে ফেলা হচ্ছিল। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গভীররাতেই অনলাইনে সরব হই আমরা কয়েকজন। ওইটা মোছা হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে কয়েকজন হাসিনার অন্য একটা ক্যারিকেচার আঁকে। কিন্তু কথাটা হলো, ভিন্নটা কেন করা হবে, আগেরটাই লাগবে, হুবহু আগেরটাই এবং ওইটার ওপরও কালি মেখে, রক্তের মত লাল রঙ দিয়ে ডা–ই–নি টাইপ ভাইভই রাখতে হবে, আর ওইটাতে যেভাবে জুতার মালা দেওয়া ছিলো, ওই একইভাবে রাখতে হবে। মানে হুবহু রেস্টোর করতে হবে। ওইটার ভেতর যে মেসেজ ছিলো, নতুনটার ভেতর সেটা নাই। ’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে দেশের জনগণ হাসিনাকে যেভাবে প্রত্যাখ্যান করে উৎখাত করেছিলো, সেটার অটো রিপ্রেজেনটেশন ছিলো ওইটাতে। আর হুটহাট করে যারা এইটা মোছার প্ল্যান করেছিলো বা যাদের মাথা দিয়ে এই প্ল্যান বের হয়েছিলো, তাদের প্রত্যেককে আইডেন্টিফাই করে কঠোর জবাবদিহিতার ভেতর নিয়ে আসা উচিৎ। ’
অবশ্য এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে জানান, গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি তোলে। এই ছবিগুলোর সঙ্গে শেখ হাসিনার এবং শেখ মুজিবের ছবি যায়। তাই ওরা বলেছে, এখনো টিএসসিতে কীভাবে তাদের ছবি থাকে। তখন আমি ভারপ্রাপ্ত স্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফাকে বললাম মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বলার জন্য। পরে মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে মুছে ফেলা হয়।
তিনি বলেন, এটি একেবারেই একটা নিষ্পাপ সিদ্ধান্ত। এখানে কারও কোনো ষড়যন্ত্র নেই। কালকে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ওখানে চারুকলার দুজন শিক্ষার্থী এটাকে পুনরায় আঁকতে চাইল। আমি বললাম তোমরা যেভাবে আঁকতে চাও আঁকো। এছাড়া তাদের বলেছি, আগামীকাল আমি দুঃখপ্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেব। এছাড়া এই স্তম্ভকে স্থায়ীভাবে ‘ঘৃণা স্তম্ভ’ ঘোষণা করব। ওরা সবাই এটা মেনে নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন চাইবে, তেমন করেই স্তম্ভটি পুনরায় তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রক্টর।
এদিকে রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রোর পিলারে শেখ হাসিনার এই ছবি সারা পৃথিবীর কাছে ঘৃণাস্তম্ভ প্রতীক। কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এই চিহ্ন মুছে দিতে চায়, তা তদন্ত করে বের করতে হবে।
এছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক আব্দুল কাদের ও আবু বাকের মজুমদারও।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
এইচএ/