ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পড়বো নতুন বই, গড়বো বাংলাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৮
পড়বো নতুন বই, গড়বো বাংলাদেশ নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত কোমলমতি শিশুরা-ছবি- ডি এইচ বাদল

ঢাকা: নতুন বছরের প্রথম সূর্যের আলোয় ঝলমলে সকাল। সবুজ ঘাসের ডগায় তখনও চিকচিক করছিলো শিশির। এমন ঝলমলে সকালে এসেছে হাজারো শিশু। রং-বেরংয়ের পোশাক পরিহিত শিশুদের হাতে রঙিন বেলুন-ফেস্টুন, বাহারি আয়োজনে সাজানো মাঠে বসেছিলো কচি-কাঁচাদের আসর। হাতে হাতে নতুন বই পেয়ে উদ্বেলিত শিশুরা। আনন্দে মাতোয়ারা ছিলো সারা সকাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) খেলার মাঠে এমন সুন্দর সকাল এসেছিলো শিশুদের মধ্যে, ক্যাপ ও ব্যাচ পড়ে জড়ো হয়েছিলো প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুরা; ফিরেছেও হাসি মুখে।
 
বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছিলো এ মাঠে।

লালবাগ, কোতোয়ালী, ডেমরা, সূত্রাপুর, মতিঝিল থানার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছিলেন শিক্ষক-অভিভাবকরাও। নানান রংয়ের কাপড়ে ঘেরা মাঠের মধ্যে ছিলো আয়োজন, আর খোলা আকাশে তখন উড়ছিলো রঙিন বেলুন। এর সামনেই ছিলো মঞ্চ।
 
মঞ্চে অতিথিদের সামনে সকাল ঠিক ১০টার পরপরই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর একে একে শুরু হয় সংগীত পরিবেশন। ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘আমরা সবাই রাজা’- এমন সব গানে সুর মেলায় শিশু-শিক্ষার্থীরাও। হাত উঁচিয়ে, তালি দিয়ে কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ।
 
সুরের ঝংকারের পালা শেষ করে ঘোষণা আসে, এবার আসছেন হানিফ সংকেত, ইত্যাদির হানিফ সংকেত! সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিশুরা।

বই হাতে শিশুরা উচ্ছ্বসিত 
“আজকে আমার মনে হচ্ছে আমি ফুলের সঙ্গে আছি”, সামনে হাজারো শিশু দেখে এমন কথা বলে বক্তব্য শুরু করেন হানিফ সংকেত। বলেন, আমাদের সময় কল্পনাও করতে পারিনি এমন উৎসবে বই পাবো, বড় ভাইদের বলে রাখতাম পুরনো বইয়ের জন্য।
 
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “শুধু বই পেলেই হবে না, বই জ্ঞানের আলো ছড়ায়, তোমরা আলোকিত করে জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে। স্কুলে যেতে হবে, গাইড বই, কোচিং বাদ দিতে হবে”।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বলেন, আজকের এ দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর শিশুদের হাতে এদিনে নতুন বই তুলে দেই। প্রধানমন্ত্রী আগেই বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। আমরা প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।
 
তার আগে একে একে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন, সংসদ সদস্য আ ক ম জাহাঙ্গীর ও উম্মে রাজিয়া কাজল।
 
প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ-উজ জামানের সভাপতিত্বে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
 
বক্তব্যের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এরপরই প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করেন মন্ত্রী।
 
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীকে চার রংয়ের ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮০টি, প্রাক-প্রাথমিককে ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি আমার বই এবং ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হচ্ছে।
 
এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের পিছিয়ে পড়ার বিষসয়টি চিন্তা করে তাদের নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়নের বিষয়ে এবছরই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ৩৪ হাজার ৬৪২টি আমার বই ও ৩৪ হাজার ৬৪২টি অনুশীলন খাতা এবং প্রথম শ্রেণির ৭৯ হাজার ৯৯২টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে বিতরণ করা হচ্ছে।
 
এবছর প্রাক-প্রাথমিকে এবং প্রথম শ্রেণির সর্বমোট এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি পাঠ্যপুস্তক, পঠন-পাঠন সামগ্রী মুদ্রণ করা হয়েছে। ২৪ জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই পাঠানো হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
 
কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রীর হাতে বই পাওয়া শিক্ষার্থীদের একজন দ্বিতীয় শ্রেণির রাজিয়া সুলতানার চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। জানায়, খুব ভালো লাগছে, নতুন বই পড়বো, আজ থেকেই।
 
আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহন নতুন বই পেয়ে বার বার পাতা উল্টাচ্ছিলো। জানায়, নতুন বই পড়বো, দেশ গড়বো।
 
খুদে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও উচ্ছ্বসিত এমন উৎসবে এসে তাদের শিক্ষার্থীদের বই পাইয়ে দেওয়ার জন্য। আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, বছরের প্রথম দিন বই পাওয়া ছোট শিশুদের জন্য আনন্দের।
 
অনুষ্ঠান রাঙাতে তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘ডিসপ্লে’তে অংশ নিয়েছেন বলে জানান শিরিন আক্তার। হলুদ আর বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরে মঞ্চের দুই পাশে ছোট ছোট মেয়েদের ‘ডিসপ্লে’ নজর কাড়ে সবার।
 
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বেলা ১২টার দিকে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ব্যান্ডের তালে তালে পুরো মাঠ ঘুরে বেড়ায় শিশুরা। শীতের সকাল পেরিয়ে মাথার উপরে সূর্য যখন, তখন হাতে হাতে নতুন বই নিয়ে ঘরে ফেরা শুরু করে কোমলমতি শিশুরা।

বর্ণিল আয়োজনে বই উৎসব

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।