ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্নফাঁস কমবে, বাড়বে পরীক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৮
প্রশ্নফাঁস কমবে, বাড়বে পরীক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা! শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার মা শিরীন আক্তার। ছবি-কামরুজ্জামান দিপু

ঢাকা: প্রশ্নফাঁস এড়াতে চলতি বছর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) পদ্ধতি আর থাকছে না। ফলে এখন থেকে শিক্ষার্থীদের পূর্ণ ১০০ নম্বরের ওপর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। 

তবে এমন নিয়মে প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা এড়ানো গেলেও শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা বাড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।  

তাদের মতে, প্রশ্নফাঁস এড়াতে সরকারের ধারাবাহিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলমান।

এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দিলে প্রশ্নফাঁস কমতে পারে। কারণ, পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে যদি সৃজনশীল প্রশ্নফাঁস হয় সেটা দেখে উত্তর লেখা কঠিন হবে। এ বিষয়টি মাথায় রাখলে হয়তো প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে। তবে, এক্ষেত্রে সবার আগে জরুরি সংশ্লিষ্টদের মানসিকতা পরিবর্তন। নয়তো যতো কিছুই করা হোক প্রশ্নফাঁস পুরোপুরি বন্ধ সম্ভব নয়।  

এদিকে, এ বছর থেকেই আর এমসিকিউ পদ্ধতি থাকছে না। সম্পূর্ণ সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হোক তা চান না বেশিরভাগ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।  তারা বলছেন, হুট করে বছরের এ সময়ে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ, প্রায় সব বিদ্যালয়েই এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৩০ ও সৃজনশীল প্রশ্নে ৭০ নম্বর ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এভাবেই আগামী মাসে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এখন হঠাৎ করে এমন পরিপত্র জারির মাধ্যমে নিয়ম পরিবর্তনে বিড়ম্বনায় পড়বে শিক্ষার্থীরা।  

এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে এমসিকিউ থাকছে না মর্মে পরিপত্র জারি করা হলেও স্কুল, অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থী কেউই জানে না ঠিক কতগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্নের মানই বা কি হবে। আগের নিয়মে ৩০ নম্বরের জন্য ৩০টি এমসিকিউ এবং ৭০ নম্বরের জন্য সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। এখন নতুন নিয়মে এমসিকিউ বাদে ঠিক কতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বা পরীক্ষার সময় বাড়বে কি না, প্রতি প্রশ্নে নম্বরের পুনর্বিন্যাস হবে কি না তাও কেউ জানে না।  

এ বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাষ্য, আমি চাই সৃজনশীল ও এমসিকিউ দু’টোই থাকুক। কারণ সাতটি সৃজনশীল লিখতে গেলেই অনেক কষ্ট হয়। এখন যদি সেটি বেড়ে ১০ হয়, তাহলে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে না।  

তবে, মেয়ের কথার সঙ্গে একমত নন জান্নাতুল ফেরদৌসের মা শিরীন আক্তার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্নফাঁস হোক সেটা আমরা চাই না। তাই এমসিকিউ উঠিয়ে দিলে যদি প্রশ্নফাঁস না হয় সেটাই ভালো। শিক্ষার্থীদের মাথা থেকে প্রশ্নফাঁসের চিন্তা চলে গেলে তারা পড়ালেখায় মনোযোগী হবে।  

তবে, এ পদ্ধতি আগামী বছর থেকে কার্যকর করার পক্ষে তিনি।  

ইশতিয়াক হাসান নামে আরেক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্নফাঁস এড়াতে যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে মাথায় রাখতে হবে, কোমলমতি শিশুদের ওপর যেন বিষয়টি বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। এজন্য খুব সাবধানে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। আর পরবর্তী বছর থেকে এই নিয়ম চালু করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।   

পুরান ঢাকার সিলভারডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এমন কোনো পরিপত্র এসেছে কিনা চেক করা হয়নি। তবে এ পদ্ধতি প্রবর্তনের সুবিধা অসুবিধা দু’টোই আছে। এমসিকিউ উঠে গেলে প্রশ্নফাঁসের প্রবণতা হ্রাস পাবে। কিন্তু একই সঙ্গে এখন সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেখানে যদি নতুন নিয়মে ১০টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়, সেটা চার ঘণ্টায়ও সম্ভব নয়। কারণ তাদের বয়সের তুলনায় এ ভারটা অনেক বেশি হয়ে যাবে।  শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার মা শিরীন আক্তার।  ছবি-কামরুজ্জামান দিপু

তিনি আরো বলেন, যখন কোনো নিয়মের পরিবর্তন করা হয়, তখন চলতি বর্ষের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রেজাল্টের গড় হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরবর্তী সময়ে যখন তারা উচ্চ পর্যায়ে যাবে তখন এই বর্ষের ছাত্ররা অন্যদের তুলনায় ফলাফলে পিছিয়ে যাবে। এছাড়া এখন হুট করে এমন সিদ্ধান্ত ওদের ওপর চাপিয়ে দিলে ওরা নিরুৎসাহিত হবে। তাই এ নিয়মটি পরবর্তী বছর থেকে চালু করলে সবচেয়ে ভালো হবে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে।

এর আগে মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বৃত্তির ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক সমাপনীতে এমসিকিউ রাখছি না। স্কুলগুলোতে মেসেজ চলে গেছে। স্কুলে বাচ্চাদের বলেছি পুরোপুরি সিলেবাসের ওপর থাকো। যাদের জানার দরকার বিশেষ করে শিক্ষকরা সবাই জেনে গেছেন।  

২ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘন্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮

কেডি/এমএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।