ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

পাবনায় এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৮
পাবনায় এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাবনা: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও ওরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চায়। শত বাধাও ওদের পথ চলা থেমে নেই। চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাবনায় ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অংশ নিয়েছে। এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যুবক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা শহরের শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমি কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা হলো-নরসিংদী জেলার শিহাবুদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইল জেলার আবদুল্লাহ আল আমিন, আবুল কালাম আজাদ, গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা, জামালপুরের গোলাপ মল্লিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহাদত হোসেন, পঞ্চগড় জেলার রোকনুজ্জামান, দিনাজপুরের আব্দুল আজিজ, কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান, ময়মনসিংহের মোজাম্মেল, জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী, বরিশালের হুমায়ুন কবির এবং পাবনার মনিরুল ইসলাম।

এ ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনা সদর উপজেলার সিংড়া মহল্লার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘মানব কল্যাণ ট্রাস্ট’ এর আশ্রয়ে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রুতি লেখকদের শোনান এবং শ্রুতি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। এ কারণে তাদের জন্য তিন ঘণ্টার অতিরিক্ত মাত্র ২৫ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। এ সময় যথেষ্ট নয় বলে তারা দাবি করেছেন।

সে আরো জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এ কারণে সাতজনের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ছিল। পরীক্ষার তিনদিন আগে তারা জানতে পারে বোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকের অনুমোদন দিচ্ছে না। নির্ধারিত একজনের ৫ হাজার টাকা করে ১৬ জন শ্রুতি লেখকের জন্য মোট ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করা থাকলেও নানা রকম তাল-বাহানা করে বোর্ড। অবশেষে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সারুল ইসলাম বিষয়টা জানার পরে এ ব্যাপারে বিশেষ সহযোগিতা করেন। এরপর ওই সাতজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার আগের দিন রাজশাহীতে গিয়ে বিষয়টা সমাধান করতে পারেন।

মানব কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা সংগ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যোগ হয়েছে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতা। সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে তারা সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন। এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে।

মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দূরের কথা লেখাপড়া করার নূন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তারপরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন।

তিনি আরো জানান, এ ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মতো আরো ৭২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছেন। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ জন পথ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, আটজন নবম শ্রেণিতে, ১০ম শ্রেণিতে সাতজন, একাদশে নয়জন, দু’জন এমএসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দেয়া হলে সারাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।