খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘আস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় শোকজের জবাব দিয়েছেন ৪৪ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পাঠানো নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ৪৪ শিক্ষার্থী সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার মধ্যে লিখিত জবাব দেন।
কুয়েটের মুখপাত্র মো. রবিউল ইসলাম বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, নির্ধারিত সময় বিকেল ৫টার মধ্যে ৪৪ শিক্ষার্থী শোকজের জবাব দিয়েছেন। আগামী ৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শৃঙ্খলা মিটিংয়ে শোকজের জবাবসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর পর আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ১১টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর পাঠানো এ নোটিশে শিক্ষার্থীদের ৩ জানুয়ারির মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার প্রচেষ্টার জন্য গত ৩০ নভেম্বর ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করে। সাধারণ সম্পাদক সহ উপস্থিত ছেলেরা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। পরে বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন।
শিক্ষকের মৃত্যুর দিন রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুজন সদস্য ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদার। তাদের মধ্যে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে ও মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর রাতে ৫ সদস্যের নতুন এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।
গত ৪ নভেম্বর ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর ড. সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ বাঁশগ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়।
প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বন্ধের মেয়াদ গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়, কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২২
এমআরএম/আরবি