ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অর্থাভাবে পড়ালেখা অনিশ্চিত জমজ ২ ভাইয়ের!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
অর্থাভাবে পড়ালেখা অনিশ্চিত জমজ ২ ভাইয়ের! মায়ের সঙ্গে গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজন।

রাজশাহী: দারিদ্র্যের দৈন্যতার মধ্যে বেড়ে উঠেছে জমজ দুই ভাই গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজন। উপার্জনক্ষম দুই বার স্ট্রোক করে অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের নেমে আসে চরম অর্থিক সংকট।

তবে, দুই ভাই অদম্য ইচ্ছা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে সেটির প্রতিফলন দেখিয়েছেন। এবার এসএসসি পরীক্ষায়ও তারা আবার চমক দেখিয়েছে। সব বাধা পেরিয়ে দুই ভাই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। একইসঙ্গে তাদের এক বছরের বড় বোন উম্মে কুলসুম সিনথিয়া জিপিএ-৫ এর ভাগ্যের দুয়ার থেকে ফিরে গেছে। অভাবের বাধ ভেঙে সাফল্যের চ্যালেঞ্জ এখন সামনের দিকে।

তারা তিন ভাই-বোন মনিগ্রাম নতুনপাড়া গ্রামের বাবা আবদুস সামাদ, মা রুনা লাইলার সন্তান। তিনজনই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে, ফলাফলের ভিত্তিতে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারলেও লেখাপড়ার খরচ বহন নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন জমজ দুই ভাই। তাদের বোন উম্মে কুলসুম সিনথিয়া মনিগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডর অধীনে পরীক্ষা দিয়ে ৪ দশমিক৭৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের মামা হুমায়ন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, ‌‘দীর্ঘদিন থেকে ভগ্নিপতি অসুস্থ, তাই কোন কাজও করতে পারেন না। আগে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে সংসারে কিছুটা খরচ জোগাতেন। তাদের দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা টিনের এক রুমে থাকে জমজ দুই ভাই। আরেক রুমে বোন। আর বারান্দায় থাকেন বাবা-মা। এমন অর্থিক সংকটের মধ্যে তারা টিউশনি করিয়ে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। কলেজে আরো খরচ বেশি তাই সেটি এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে’।

তাদের মা রুনা লাইলা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে মামার ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেও নিজেরদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। অনেকদিন সকালে ঘরে কোন খাবার ছিল না। তারা না খেয়েই স্কুলে গেছে। এমন অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে তারা পড়াশোনা থেকে সরে আসেনি। তবে, মেয়েটা একটু শারীরিক প্রতিবন্ধী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজন ও সাজন জানান, তারা দুই ভাই লেখাপড়া করেই ভালো কিছু করতে চান। তাই অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা থেকে পিছু হটেননি। তাদের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডারে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হওয়ার। এজন্য এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়’।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা দুই জমজ ভাই ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তারা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে যতটা সম্ভব আমরা সহযোগিতা করেছি। তবে, সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে তাদের স্বপ্ন পূরণ আরও সহজ হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।