বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই নৌকার মাঝি আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে নগরে স্লোগানসহ আনন্দ মিছিল ও শোডাউন দিচ্ছেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিরোধীরা। এর সঙ্গে যোগ দিতে দেখা গেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) অনুসারীদেরও।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর শনিবার (১৫ এপ্রিল) বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা কিছুটা চুপচাপ থাকলেও রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকেল থেকে তারাও শহরে মোটরসাইকেল ও পদযাত্রা মহড়া করেছেন।
রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর নগরের সদররোডে মোটরসাইকেলে নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান ও ব্রজমোহন কলেজ সংলগ্ন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম এবং তার অনুসারীরা পদযাত্রার মাধ্যমে মহড়া দেন। এ সময় তারা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান মেয়রপন্থিদের কারণে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসে মাহিন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) স্ট্যান্ড, মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, বোট ঘাটসহ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমান সিটি মেয়র দলের মনোনয়ন না পাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের রুপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন থ্রি হুইলার ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে নিয়ন্ত্রণে নিতে যায় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান সুমন মোল্লা ও সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক। এ সময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সুমন মোল্লা জানান, থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ড ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করতেন মীর রনি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে চাঁদা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর হস্তক্ষেপে এখানে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছিল জানিয়ে রুপাতলী মিনিবাস টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, মেয়র সাদিক দায়িত্ব নেওয়ার আগে এখানে যারা চাঁদাবাজি করতেন তারাই এখন আবার এর দখল নিতে মহড়া দিচ্ছেন।
এদিকে শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত নগরের ভাটারখাল সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর ডিসি ঘাটের স্পিডবোট ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় মেয়রপন্থিদের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন শাহ ও তার অনুসারীদের। পরে রোববার তারা ট্রিপ প্রতি বোট থেকে ১শ টাকা তোলা বন্ধ করে দেয় এবং বন্ধ থাকা বোট চালুর দাবি জানান।
সাদ্দাম জানান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল আমাদের মালিকানাধীন ১০টি স্পিডবোট বন্ধ করে দেয় এখানে। তারপর থেকে আমরা মানবেতর জীবনযাপন পালন করা শুরু করি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ঘাটে অবস্থান নিয়েছি। সোমবার থেকে সঠিক নিয়মে বোট চলবে। এখানকার বোট মালিকের একটাই দাবি চাঁদাবাজ মুক্ত হোক স্পিডবোট ঘাট।
১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখর দাস খোকন বলেন, সাত মাস ধরে আমাদের বোট বন্ধ করে দিয়েছেন নিরব। আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের চাঁদাবাজ বানাইয়া দিয়েছে। কিন্তু এখন এখান থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার টাকা চাঁদাবাজি হয় হরদমে।
তবে এখানে কলম্যান ও স্টাফদের বেতন দিতেই বোট থেকে ১শ টাকা করে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বর্তমান ঘাট নিয়ন্ত্রণকারীদের মালিকদের একজন কবির সিকদার।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল সাংবাদিকদের বলেন, স্পিডবোট ঘাটে আমার কোনো বিষয় নেই। সেখানে চলাচলকারী স্পিডবোটগুলো দিয়ে ৪/৫শ টাকা করে চাঁদা নিতেন সাদ্দাম ও তার লোকজন। বিষয়টি সম্পর্কে মেয়র মহোদয়ের কাছে অভিযোগ গেলে তিনি চাঁদাবাজ সাদ্দামের স্পিডবোটগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে চাঁদাবাজি মুক্ত করা হয় স্পিডবোট ঘাট। কেবলমাত্র কর্মচারীদের বেতন বাবদ ১শ টাকা করে নেওয়া হতো।
মেয়র মহোদয় মনোনয়ন পাননি শুনেই পুরনো চাঁদাবাজরা আবার ঘাট দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
অপরদিকে স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়র মহোদয় যেভাবে সমাধান করে দিয়েছিলেন সেভাবেই স্পিডবোট চলবে। বোট ঘাটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি।
এদিকে শনিবার রাত থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে কিছু নতুন মুখের আনা-গোনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপের নেতারা। তবে এরা কারা তা বলতে পারেননি বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে।
এছাড়া শনিবার রাতেই ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরের দক্ষিণ আলেকান্দায় এবং তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বৈদ্যপাড়া এলাকায় হাতাহাতি মারামরির ঘটনাও ঘটেছে।
বরিশাল নগরীতে আনন্দ মিছিল করা সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের ভিপি মঈন তুষার বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা বরিশালে নৌকার মনোনয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে বরিশাল নগরবাসীর অভিশাপমুক্ত করেছেন। নগরবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে নগরজুড়ে উল্লাস করছে।
২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, বরিশাল নগরবাসী যে জিম্মিদশার মধ্যে ছিল সেটা প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা বুঝতে পেরে খোকন ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। খোকন ভাই নির্বাচিত হলে চাঁদাবাজমুক্ত হবে বরিশাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এমএস/এএটি