রাজশাহী: সদ্যই দেশের ২৩৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে দুই দিন।
তবে বিএনপির হাই কমান্ডের দিকে না তাকিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের আগেই রাজশাহীতে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য পৌর মেয়র প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই চালাচ্ছেন প্রচারণা। এর উপর আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে সরাসরি দলীয় সমর্থনই প্রত্যাখ্যান করেছেন পবা বিএনপি সমর্থিত এক প্রার্থী।
এদিকে, জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানান রাজশাহীর ১৩টি পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহীদের নামের তালিকা ইতোমধ্যে দলের হাই কমান্ডের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, রাজশাহীর ১৩ পৌরসভায় দলীয়ভাবে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গোদাগাড়ী পৌর বিএনপির সদস্য গোলাম কিবরিয়া রুনু, যুবদল সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব এবং সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলামের নাম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার কাকনহাট পৌরসভার জন্য পৌর বিএনপি সভাপতি ইসমাইল হোসেন খাঁন ও বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিনের নাম রয়েছে।
রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা ফিরোজ সরকার, পৌর বিএনপির সভাপতি বিশ্বনাথ সরকার, উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান। মুণ্ডুমালা পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি মোজ্জাম্মেল হক, পৌর যুবদলের সভাপতি ফিরোজ কবীরের নাম রয়েছে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আলাউদ্দিন আলো, পৌর বিএনপির সহসভাপতি সেলিম রেজা, পৌর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমানের নাম রয়েছে।
বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আবদুর রাজ্জাক ও পৌর যুবদলের সভাপতি শাহিনুর ইসলাম শাহীন। একই উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম শামসুর রহমান মিন্টু, পৌর যুবদলের সভাপতি আবদুল আলিম বাবু ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি তরুণ নেতা এসএম আরিফুল ইসলাম আরিফের নাম রয়েছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সদর পৌরসভার জন্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর আলী বাবলু, উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সৈয়দ জামাল উদ্দিন, সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান মন্টু এবং বিএনপি নেতা মাইনুল ইসলাম রঞ্জুর নাম পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া সদর পৌরসভায় পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল মিয়া, সহসভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক সভাপতি আলী হোসেন ও মমতাজ উদ্দিন লাল্টুর নাম রয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌর নির্বাচনের জন্য পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র নজরুল ইসলাম মাস্টার, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের নাম রয়েছে।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সদর পৌরসভায় নির্বাচনের পৌর বিএনপির সভাপতি কাউমুদ্দিন ও বিএনপি নেতা জাকিরুল ইসলাম বিকুল এবং রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানার নাম রয়েছে। এছাড়া পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভায় রফিকুল ইসলাম রফিকের নাম রয়েছে।
পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৮ ডিসেম্বর। তবে রাজশাহীর পবা উপজেলার দলীয় সমর্থন প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি সমর্থিত এক প্রার্থী।
এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দলীয় সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বুধবার থেকে ব্যক্তিগতভাবে প্রচারণায় নেমেছেন। ফলে এই উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কোনো প্রার্থীই থাকলো না। এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং জামায়াত সমর্থিত আলাদা আলাদা প্রার্থী রয়েছেন।
জেলা বিএনপির ওই সূত্রটি জানান, গত ২১ নভেম্বর রাজশাহীর উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা পবা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বকুল আহাম্মেদ শেখকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেন।
তিনি গত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে দলের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে বোঝা-পড়া না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বকুল এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী বকুল আহাম্মেদ শেখ বলেন, জেলার এক শীর্ষ নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন ব্যয় হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করায় তিনি দলীয় সমর্থন ছাড়াই প্রচারণা শুরু করেছেন। এর চেয়ে এই মুহূর্তে তিনি বিশেষ কিছু আর বলতে পারবেন না বলে জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী বকুল আহম্মেদ।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রের বিশেষ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, তারা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে আছেন। কেন্দ্র থেকে যে ধরণের সিদ্ধান্ত আসবে সেভাবেই ব্যবস্থা নিবেন। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।
প্রসঙ্গত, দেশে ফেরার পর বুধবার (২৫ নভেম্বর) রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে ওই বৈঠক শেষে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের জানান, পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। এরই মধ্যে পৌর নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ২০ দলীয় জোটের শরীকদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার।
বৈঠকের পর তিনি নিজেই সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএস/আরআই