ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

মনোনয়নের আগেই মেয়র প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে পোস্টার!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
মনোনয়নের আগেই মেয়র প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে পোস্টার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: পুরো উপজেলায় তার কোনো পরিচিতি নেই। একমাত্র পরিচয় তিনি ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সুমনের ছোট ভাই।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি নৌকা প্রতীকে পোস্টার ছাপানোর মতো ‘অবাক কাণ্ড’ ঘটিয়েছেন।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত এ নেতার নাম আবুল খায়ের। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগেরও সদস্য। তার এ পোস্টার ছাপানোর ঘটনায় তোলপাড় চলছে উপজেলার দলীয় পরিমণ্ডল ছাপিয়ে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনেও।

রোববার (২৯ নভেম্বর) রাতে যখন দলীয় একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে জেলা আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে জরুরি সভায় বসেছে তখন, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ‘হাইব্রিড’ এ নেতার পোস্টার।

দলীয় নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে এটি একটি অপকৌশল বলে অভিযোগ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাহাবুব। একই রকম মত দেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম।

স্থানীয়রা জানান, চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বে অস্থির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক চাচা আব্দুস সাত্তারকে রাজনৈতিক মাঠে কোণঠাসা করতে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন ভাতিজা মাহমুদুল হাসান সুমন।

সাবেক সংসদ সদস্য সাত্তারের আনুকূল্যে গত পৌর নির্বাচনে মেয়র হন তার স্ত্রীর বড় ভাই হাবিবুর রহমান হবি। এবার তার মনোনয়ন ঠেকাতে সুমন প্রার্থী করেছেন তার ছোট ভাই স্থানীয় এসবি বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়েরকে। বছর খানেক আগে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদও বাগিয়ে আনেন খায়ের।

অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকেই নানা ‘কাণ্ড-কীর্তি’ করে চলেছেন খায়ের। এবার তার খায়েশ হয়েছে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র হওয়ার! আর এ কারণে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আগেভাগেই নৌকা প্রতীকে পোস্টার ছাপিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে প্রচার দিতে শুরু করেছেন।  

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাহাবুব অভিযোগ করেন, দল মনোনীত প্রার্থী হলেই কেবল নৌকা প্রতীক লাগানো যায়, এটাই নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম ভঙ্গ করেছেন খায়ের। তার লোকজন বলাবলি করছেন, তাদের আগেই নৌকা প্রতীক দিয়ে দিয়েছে। এটি ধৃষ্টতার শামিল। জেলা ও কেন্দ্রীয় আ’লীগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, খায়ের এসবি বাহিনী নামে একটি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন। জামায়াত-বিএনপি’র লোকজনদের এখানে ভর্তি করে তিনি দাপট দেখাচ্ছেন। ক’দিন আগে মাসুদ নামের এক ছেলেকে ধরে এনে মারপিট করে এ বাহিনী। এসব কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

এসব বিষয়ে নৌকা প্রতীকে পোস্টার ছাপানো মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আর আমি নৌকা প্রতীক দিয়ে শুধুমাত্র সবার দোয়া চেয়েছি।  

মনোনয়ন প্রাপ্তির আগেই পোস্টারে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা যায় কি-না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মোবাইলের কল কেটে দেন তিনি।

তবে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর আ’লীগ সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খায়ের মিথ্যাচার করেছেন। পৌর আ’লীগ আমাকে একক প্রার্থী করেছে। আর আজকে আমি একক প্রার্থী হিসেবে জেলা আ’লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্তের আগেই নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে পোস্টার ছাপিয়ে খায়ের দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।