ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

ভোটের আমেজে মার্কার অপেক্ষা !

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
ভোটের আমেজে মার্কার অপেক্ষা ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে ফিরে: ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর এলাকার বাবুল মিয়ার চায়ের দোকান। রাজমিস্ত্রি বাচ্চু মিয়া, মনিহারি দোকানি আবুল কালামসহ জনাদশেক মানুষ এখানে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।

আলোচনার বিষয় নির্বাচন।

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে তাদের চায়ের কাপে ঝড় উঠে গেছে।

নির্বাচনের আমেজ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই গালভরা হাসি দিয়ে রাজমিস্ত্রি বাচ্চু মিয়া (৪৫) বললেন, ‘সব দল মিইল্যা নির্বাচন করতাছে। নির্বাচনী আমেজও পাওয়া যাইতাছে। অহন আমরা ভোট দিবার অপেক্ষা করতাছি। বুইজ্জা শুইন্ন্যা ভোট দিমু। ভোটকেন্দ্রে গিয়াও মন ঘুইরা যায়’।

বাচ্চুর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিলেন পাশেই বসা কালাম (৪০)। চায়ের কাপে চুমুক মেরে বলে উঠলেন, ‘মার্কা ছাড়া তো নির্বাচন জমে না। প্রার্থীরাও কোমর বাইন্ধ্যা অহনও মাঠে নামে নাই। মার্কা আউনের (আসার) পর খেলাডা জমবো’।

বাচ্চু আর কালামের কথায় মাথা নেড়ে ‘হ, হ’ করে সায় দিচ্ছিলেন অন্যরা।

পাটবাজার মোড়ের এ চায়ের দোকানে বিভিন্ন এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষেরা সন্ধ্যার পরপরই একত্রে জড়ো হন। দীর্ঘ সময় ধরে ভোটের আলাপে মেতে ওঠেন তারা।

শুধু পাটবাজারই নয়, ধানমহাল, থানা ‌এলাকা, সরকারপাড়া, মধ্যবাজার, উত্তর বাজারসহ পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান, হোটেল, হাট-বাজার, বিপণি-বিতান- সর্বত্রই আড্ডার মূল বিষয় এখন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন।

ময়মনসিংহের রাজনীতি সচেতন উপজেলা গৌরীপুর। জমিদারি পরগনার ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এলাকা এটি। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত প্রাচীন এ পৌরসভায় মোট ভোটার ১৮ হাজার ৩ জন। কিন্তু পৌর এলাকা হলেও দিনের পর দিন কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় পৌর বাসিন্দাদের মাঝেও রয়েছে ক্ষোভ, আছে কষ্ট।

নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। কিন্তু তাকে মেনে নিতে না পেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র মো: শফিকুল ইসলাম হবি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আবু কাউসার চৌধুরী রন্টি।

আর বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন পৌর যুবদলের আহবায়ক সুজিত কুমার দাস।

শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেলো, নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ এখনো না হওয়ায় প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের কর্মী-সমর্থকরাও কিছুটা ঢিলেঢালা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিসগুলোও খুব একটা জমজমাট হয়ে ওঠেনি। প্রতীক বরাদ্দেন পর পরই দলে দলে ভাগ হয়ে তাদের কর্মী বাহিনী প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। ছক কষে ভোটারদের মন গলানোর কাজ শুরু করবেন।

পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবাজার বকুলতলা এলাকার চৌধুরী শপিং সেন্টারেও জমে উঠেছিল ভোটের আলাপ। এখানকার একটি দর্জির দোকানে বসে মেয়র প্রার্থীদের চূলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব দর্জি আব্দুল হাকিম, ফজলুল হক, ব্যবসায়ী রাজা মিয়াসহ ৭-৮ জন। এখানে আড্ডার মধ্যমণি ফজলুল হক।

ফজলুল হক বললেন, ‘নির্বাচনে কাটাকাটি হইবো রফিক আর সুজিতের মধ্যে। হবি আর রন্টিও কম যাইতো না। তারা দুইজনও খেলা ভালোই জমাইছে। শেষ পর্যন্ত এরা ভোটের মাঠে থাকলে মেয়র রফিকুলের বিপদ হইবো’।

রাজা মিয়ার মন্তব্য, ‘প্রার্থীরা কেউ কারো চেয়ে কম না। আওয়ামী লীগের ৩ জনই শক্ত প্রার্থী। ১৩ ডিসেম্বর না গেলে ভোটের হিসাব-নিকাশ করুন যাইতো না’। অন্য একজন বলে উঠলেন, ‘পৌর এলাকায় কিন্তু বিএনপির ভোট বেশি। এইবার বিএনপির প্রার্থীও যদি চমক দেখায়...’।

নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ পৌর এলাকার নারী ভোটারদের মাঝেও। বাগানবাড়ি এলাকার নুরুন্নাহার (৪৫) নামে এক ভোটারের সোজা সাপ্টা জবাব, ‘ভোট দিমু, এইটা তো আনন্দের। প্রার্থীরা আইয়া ভোট চাইতাছে। এইবার আর সস্তা কথায় চিড়া ভিজবো না। প্রার্থী দেইখ্যা ভোট দিমু’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।