ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৫০টিরও বেশি পৌসভায় দলের মেয়র প্রার্থীর বিপরীতে প্রায় ৭৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বিভিন্নভাবে চেষ্টা ও কৌশল অবলম্বন করে চলেছে দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত কতোটি পৌরসভা থেকে কতোজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো সম্ভব হবে সে ব্যাপারেও সন্দিহান আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, আগামী ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বুঝিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শনিবারও (০৫ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী সমস্যার সমাধানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে না নিলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। এরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) ছিলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এ নির্বাচনে প্রতিটি পৌরসভার জন্য আওয়ামী একজন করে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করে দিলেও ৫০টিরও বেশি পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। কোনো কোনো পৌরসভায় ৩/৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীদের যেভাবেই হোক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাদেরকে বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের চেষ্টার অগ্রগতি ও কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয়। তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কাউকে কাউকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক ও আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন।
এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিস্কারের ভয় দেখিয়েও তাদেরকে দমানো যায়নি বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, অতীতেও জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে হলেও পরে তা কার্যকর হয়নি। ফলে অনেকেই বহিস্কারের বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কিছু পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা থাকলে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিদ্রোহীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কথা বলে চেষ্টা করছেন। আশা করি, বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এসকে/এএসআর