ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

কুড়িগ্রাম থেকে শামীম খান

দলের জনপ্রিয়তাই প্রাধান্য পাবে

শামীম খান ও ফজলে এলাহী স্বপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
দলের জনপ্রিয়তাই প্রাধান্য পাবে ছবি:শামীম / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুড়িগ্রাম থেকে: কুড়িগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনের লড়াই প্রধান দুই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এবার যে দুই প্রার্থী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তারা এর আগের নির্বাচনেও ছিলেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু ব্যক্তি প্রার্থীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তির চেয়ে দলের জনপ্রিয়তা প্রধান হয়ে দাঁড়াবে এবার।
 
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাচনী চিত্র বলছে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে ক্ষমতাসীন এই দলের প্রার্থী আব্দুল জলিলই হবেন কুড়িগ্রামের আগামী দিনের মেয়র। আব্দুল জলিল এবার নিয়ে চার বার এই পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিবারই সামান্য ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরে গেছেন। এর মূলে রয়েছে তারই দলের নেতাকর্মীর বিভক্তি।  
 
সর্বশেষ গত নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাক এবং তার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজিউল ইসলাম মিলে ১৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। আর সাড়ে ১০ হাজার ভোটে বিএনপির প্রার্থী নুর ইসলাম নুরু মেয়র নির্বাচিত হন। সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আব্দুল জলিল।
  
পৌর এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী পরাজিত হয়। জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও আব্দুল জলিল গত তিন বার নির্বাচন করে মেয়র হতে পারেন নি। এর পেছনে রয়েছে দলের সঙ্গে দলের যুদ্ধ। এবারের নির্বাচনেও জলিলকে মনোনয়ন না দিয়ে কাজিউল ইসলামের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয় কুড়িগ্রাম থেকে। তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন বোর্ড থেকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আব্দুল জলিলকে মনোনয়ন দেন।  
 
দলের মনোনয়ন না পেলেও কাজিউল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে দল থেকে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের কেন্দ্রীয় ঘোষণা আসার পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কাজিউল। তিনি জলিলের পক্ষে কাজ করলেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা গেছে।  
 
তবে মেয়র প্রার্থী আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে আমি তিন বার নির্বাচন করেছি। প্রত্যেক বারই দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ষড়যন্ত্রের কারণে হেরেছি। এবার সেটা নেই। সবাইকে আমার পক্ষে আনতে পেরেছি। মানুষ আমাকে ভোট দেবেন আমার দলের ও নেত্রীর (শেখ হাসিনা) উন্নয়ন দেখে।
 
এদিকে আব্দুর রাজ্জাক এলাকার শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এলাকায় তিনি সজ্জন হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া তিন বার নির্বাচনে হেরেছেন এই বিষয়টি এবার তার জন্য সহানুভূতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সাধারণ ভোটারের সহানুভূতিতে ভোট পাবেন তিনি।   
 
তাছাড়া বর্তমান মেয়র পাঁচ বছরে পৌরসভায় তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করেন নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌর এলাকার অনেক রাস্তার দুরবস্থা দৃশ্যমান। পানি, বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে বলেও জানা গেছে। এই বিষয়গুলোও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য সুবিধা করে দিয়েছে।
  
অপর দিকে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র নুর ইসলাম নুরু। তার জনপ্রিয়তারও কমতি নেই। দলের মধ্যেও নেই কোন্দল। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী এক হয়ে নুরুর পক্ষে কাজ করছে। দলের মধ্যে কোনো সমস্যা না থাকলেও পাঁচ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তার ব্যর্থতা ভোটের অংকে ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে।  
 
তবে উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুর ইসলাম নুরু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। আমি উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।  
 
তাহলে কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ার পেছনে কারণ কি, সরকারের দিক থেকে কোনো অসহযোগিতা ছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে মেয়র নুরু বলেন, উন্নয়ন কাজে সরকার কোনো সমস্যা করেনি। আওয়ামী লীগ উন্নয়ন বান্ধব। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি আবারও জয়ী হবো। ভোট হবে ধানের শীষ আর নৌকার মধ্যে।   
 
এদিকে, কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। আওয়ামী লীগের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে যা বার বার ভাগ হয়ে যাওয়ায় বিএনপির প্রার্থীর জন্য সুবিধা হয়। কিন্তু এই বার আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে না থাকায় বিএনপির প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই জটিল হয়ে পড়েছে।  
 
এই দুই দলের প্রার্থী ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের বেলাল হোসেন নামে একজন প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারের কাছে তৃতীয় এই প্রার্থী আসতে পারবে না বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে।   
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫    
এসকে/এমজেড

** ব্যক্তির চেয়ে বড় দল ও প্রতীক
** উলিপুরে মুখে মুখে স্বতন্ত্র আর বিএনপি প্রার্থী
** প্রচারে এখনও সাড়া পড়েনি লালমনিরহাটে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।