সাভার: রাস্তাটা বেশ চওড়া হলেও দুই পাশে দোকান আর ফুটপাতে দখল করে নানা পসরা সাজিয়ে বসা হকারদের কারণে এটাকে এখন গলিই বলা ভাল।
সেই গলি দিয়ে ঢুকতেই টের পাওয়া গেলো নির্বাচনী আমেজ।
রাজধানী ঢাকার অদূরে হওয়ায় সাভার পৌরসভার গুরুত্ব অনেক বেশি। তারও আভাস পাওয়া গেলো সাভারের জামসিং, জালেশ্বর এলাকা ঘুরে।
মাথার ওপরে সারি সারি পোস্টার টাঙানো। রাস্তা ধরে যতো বেশি ভেতরে ঢোকা গেল, ততোই চড়তে লাগলো নির্বাচনী পারদ।
লক্ষ্য করবার মতো ভিড় চায়ের দোকানগুলোতে। তবে রাজধানীর খুব কাছে অবস্থান হওয়ায় সাভারের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আবহ একটু ব্যতিক্রম।
আলাপে জানা গেলো, প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ায় পর থেকেই মূলত জমে উঠছে নির্বাচন।
সাভার পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হাজি মো. আব্দুল গণি। নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থী এবার প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। কর্মী-সমর্থকসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে চলছে তার জোর প্রচারণা।
বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী এবার মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে নামা এ প্রার্থী বলতে গেলে মাঠেই নেই। এমনকি তার কোনো পোস্টারও চোখে পড়লো না।
জালেশ্বরে চায়ের দোকানে আলাপ হলো হাজী আতাউর মেম্বারের সঙ্গে। ৮৩-৯১ পর্যন্ত সাভার ইউপির মেম্বার থাকা আতাউর জানালেন, এ এলাকায় বিএনপির প্রচুর ভোট ও সমর্থক রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে জড়তা কাজ করছে। ব্যাখ্যা করে তিনি বললেন, অনেকের ধারণা ভোট দিলেও বিএনপির প্রার্থী জিততে পারবে না। তাই ভোট থাকলেও শেষ পর্যন্ত এদের ভোট আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পেয়ে যাবেন। তবে ৩০ তারিখে ভোট সুষ্ঠু হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
পাশেই ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় এ ব্যবসায়ী জানালেন, বিএনপির প্রচুর ভোটার থাকলেও তারা ভোট দিতে পারবেন কি না সংশয় রয়েছে। কেন না বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
দোকানে থাকা হামিদুল ইলাম জানান, ভোটের দিন এ এলাকার যেসব ভোটার বাইরে কাজ করেন তারা একটি বড় ফ্যাক্টর।
তিনি জানান, এলাকায় অর্ধেকের বেশি ভোটার বাইরে কাজ করেন। তারা ছুটি না পেলে ভোট দিতে পারবেন না। যা নিয়ে গোঁজামিলের ব্যবস্থা করতে পারে প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তিনি চান সুষ্ঠু ভোটের যেন ব্যবস্থা করা হয়।
হামিদুল আরো জানান, বিএনপির ভোট থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা ভোট দেবেন কি না তা নিশ্চিত নয়।
তবে জামসিং এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে গিয়ে পাওয়া গেলো সাভার পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাতকে।
তিনি দাবি করলেন, তাদের প্রার্থীর বিজয় প্রায় নিশ্চিত। তার পক্ষে জোয়ার তৈরি হয়েছে। এমনকি কর্মীরাই নিজেরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের পেছনে তেমন অর্থকড়ি খরচ হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির কর্মীদের কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, তাদের আসলে গণভিত্তি নেই। তাছাড়া তাদের মেয়র প্রার্থী নাশকতার মামলার আসামি। সব মিলিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় অনিবার্য। ৩০ তারিখে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাভার পৌরসভা কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি।
এদিকে, এই দুই প্রার্থীর বাইরেও মেয়র পদে লড়ছেন জাতীয় পার্টির মো. আজিজুর রহমান, ন্যাপের মো. মফিজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মো. মোশারফ হোসেন, আজম খান (সিপিবি), সালাউদ্দিন খান নইম স্বতন্ত্র।
৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৫৫ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ১৩ জন। ভোটকেন্দ্র ৮০টি।
সাভারের নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হলেন, ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।
সাভারের ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৪ জন। বিশাল এ ভোটারের নারী-পুরুষ প্রায় সমান। পুরুষ ভোটার ৮৬ হাজার ৪৯৩ জন ও নারী ভোটার ৮৩ হাজার ৩৬১ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
আরআই
** নির্বাচনী হাওয়া লাগেনি সাভারে