কিশোরগঞ্জ থেকে: কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে বড় দুই দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বিধা-বিভক্তি। কিন্তু প্রথমবারের দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে সদর পৌরসভায় নিজ নিজ প্রার্থীদের জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন দলীয় নেতাকর্কীরা।
প্রচার-প্রচারণাতেও নৌকা-ধানের শীষের দুই প্রার্থীকে সমানে সমান এগিয়ে রাখছেন ভোটাররাও।
তারা বলছেন, নির্বাচনে আমাদের এখানে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলেরই অবস্থান ভালো দেখা যাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটারদের কাছে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। তুলে ধরছেন উন্নয়নের ফিরস্তি কিংবা নানা প্রতিশ্রুতি।
তবে যেই নির্বাচনে জয়ী হোন না কেন-তুমুল লড়াই করে জয় পেতে হবে। শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদরের রেলস্টেশন ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল।
মো. আবদুল আলীম, পেশায় স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক পৌর এলাকার একরামপুরের বাসিন্দা তিনি। বললেন, দুইজন প্রার্থী আছেন দুই দলে। অন্য সময় যেভাবে প্রচার-প্রচারণা হতো এবার তা ভিন্নভাবে হচ্ছে।
‘প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন, দোয়া চাইছেন। জনগণও বেশ সাড়া দিচ্ছেন, অপেক্ষা করছেন ভোট উৎসবের। ’
তার সঙ্গে কথা বলার সময় ‘ভুট তো দিয়ামই’ বলে আলাপে যোগ দিলেন বত্রিশ করমপট্টির সমীরণ দাস। পঞ্চাশোর্ধ এ পান দোকানি বলেন, ইবার আমরার মইধ্যে কোনো ঝামেলা নাই, সবাই ভুট দেওয়ার লাইগ্যা চাইয়া রইছে।
রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী সামিনা সুলতানা বলেন, জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবো, দেখে বুঝে যোগ্য প্রাথীকেই ভোট দেবো।
‘তবে যারা এলাকায় থাকে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় কিংবা জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজ করে তারাই প্রাধান্য পাবে,’ বলেন ঢাকার একটি কলেজে সম্মান শ্রেণিতে পড়া এ ছাত্রী।
১০.৩৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বারভূঁইয়াদের স্মৃতি বিজরিত কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় এবার মেয়র প্রার্থী হলেন দুইজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মাহমুদ পারভেজ, আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হলেন মাজহারুল ইসলাম কাঞ্চন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপিতে বিভিন্ন সময় বিভক্তি দেখা দেয়। কিন্তু আসন্ন পৌর নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে এক হয়েছেন সবাই।
১৫ ডিসেম্বর দলীয় মেয়র প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের উপস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘এখন আর আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে সবাই কাজ করছি। ’
একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেও জয়ী করতে জনসংযোগ করছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। খরমপট্টি এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্রনেতা খায়রুল ইসলাম রুমেল বাংলানিউজকে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ পারভেজ ভাই সহজ-সরল ও ভালো মানুষ। আমরা আশা করছি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভাই বিপুল ভোটে জয়ী হবে।
‘ভোটাররা কারে ভোট দেন জানিনা, তবে সবার মুখে দুই মেয়র প্রার্থীর কথাই শোনা যাচ্ছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, প্রচারণায় দু’জনই সমানে সমান,’ বলেন শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমন মিয়া ও আবদুল খালেক।
১ লাখ ৩ হাজার ৭৯৮ মানুষের এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৪৩ জন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে লড়ছেন ৭ প্রার্থী।
আসছে ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ২৬টি কেন্দ্রে এলাকার ৬১ হাজার ৩১০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকতা।
এদিকে জেলার অন্যতম পৌরসভা কটিয়াদীতে তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে আওয়ামী দলীয় প্রার্থী শওকত ওসমান শুক্কুর, বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান এবং জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহমেদ।
২৫ হাজার ৯৫৭ ভোটারের এ পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৩০। সংরক্ষিত নারী আসনে লড়ছেন ৯ জন প্রার্থী। ‘গ’ শ্রেণীর এ পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১টি।
আর করিমগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল ইসলাম চৌধুরী পাভেল, বিএনপির আশরাফ হোসেন পাভেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান মেয়র আব্দুল কাইয়ুম।
আর সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন করছেন ৩ জন প্রার্থী। মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ২১৪ আর ভোটকেন্দ্র ৯টি।
এছাড়া ১৬ হাজার ৩৩০ ভোটারের ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হোসেনপুরে মোট পাঁচজন প্রার্থী লড়ছেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুল কাইয়ুম খোকন, বিএনপির প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী সৈয়দ হোসেন হাছু ও আব্দুল কাদির স্বপন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার আলী মৃধা রতন।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এমএ/আরএ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
** ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা