কেন্দুয়া (নেত্রকানো) থেকে: নির্বাচনে প্রার্থীরা তো মানুষের কাছে ভুট ঠিহি (ঠিক) চায়, কিন্তু এবার কন্টেস (প্রতিযোগিতা) কম হওয়ায় আগের মতো চা বেচা নাই।
নির্বাচনে চায়ের বিক্রি কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হেসে কথাগুলো বলছিলেন কেন্দুয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার চা দোকানি আবদুল আলীম স্বপন।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে যখন তার দোকানে বসে কথা হচ্ছিল, তখন এলাকার মানুষ ভোরের কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাস্তায় কেঁপে কেঁপে আসছেন ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিতে।
স্বপনের দোকানের প্রথম কাস্টমার স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন আলী। ‘স্বপন এক কাপ চা দেও দেহি, শীতের সহালে চায়ে চুমুক না দিলে কি আর অয়!’- বলতে বলতে দোকানে পাতা লম্বা বেঞ্চে বসলেন ইয়াসিন আলী।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বাংলানিউজের প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচন ভালোই চলছে, চেয়ারম্যান-কমিশনাররা (মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী) আমরার গাছে (কাছে) ভুট চাইতাছে। কিন্তু কারে ভুট দেয়াম হেইড্যা তো এহন কইতাম না। আরও ভাবতাছি, দেহি কারে দেওন যায়।
শীতে জবুথবু হয়ে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে এই দোকানে এসেছেন স্থানীয় বেকারি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি। বললেন, আমরা তো আর কিছু চাই না, রাস্তাঘাটে যাতে নির্দ্বিধায় চলাচল করা যায় সেজন্য তা সংস্কার এবং সড়ক বাতি লাগানও দরকার। এই কাজটা মেয়র সাবরা ভালোভাবেই করে, করছে।
এবারের নির্বাচনেও স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসাদুল হক মেয়র হবে বলে মনে করেন তিনি।
যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, অতীতের রেকর্ডে কেন্দুয়ায় বেশিবার আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। তবে বিএনপিরও সমর্থন আছে। কিন্তু এখানে যে পরিবারটি কেন্দুয়া পৌরসভায় প্রথম থেকে ‘রাজত্ব’ করছে এবারও তারাই হবে। জনগণকে সম্মোহিত করার শক্তি আছে তাদের। তাছাড়া এবার নৌকা প্রতীকও বেশ আকৃষ্ট করবে মানুষকে।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আসাদুল হক ভূঞাকে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তরুণ বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক।
১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আদর আলী বলেন, কেন্দুয়া পৌরসভা হওয়ার পর থেকেই আবদুল হক টানা তিনবার মেয়র হয়েছেন। এবার তার ছোটভাই প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শফিকের গ্রামের বাড়ি কেন্দুয়া পৌরসভার বাইরে। তাই স্থানীয় হিসেবে সুযোগটা আসাদুল হক নেবেন আর কি!
নয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ বক্তব্যের সঙ্গে সায় দিলেন বাসযাত্রী হাসানুল হক ও মনিরুজ্জামান রিজন। হাসানুল, রিজন ও সাইফুলদের দাবি, নতুন মেয়রের কাছে আমরা আদর্শ কেন্দুয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার হার ৮০ শতাংশ কেন্দুয়া পৌর এলাকার আয়তন ১৩ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ২৩,৭৭৫ জন লোকের বাস। ‘গ’ শ্রেণির এ পৌরসভায় ১৩ হাজার ৬৪৬ জন। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পৌর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সাল থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এমএ/এমজেএফ
** ভেদাভেদ ভুলে সমান তালে নৌকা-ধানের শীষ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
** ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা