মুন্সীগঞ্জ নতুন কোর্ট এলাকা থেকে: ‘কথা, কাজে-কর্মে এবং চলনে-বলনে ধারও লাগে, তেমনি ভারও লাগে। এর জন্য ‘নেতা’ প্রয়োজন, ‘নেতা’।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ভবনের সামনে ১নং ওয়ার্ডের একটি চায়ের দোকানে বসে ছুটির দিনে এমনই আড্ডা চলছিল। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই আড্ডা জমেছিল অনেক আগে থেকেই। এক পর্যায়ে এতে উঠে আসে নির্বাচনী প্রসঙ্গ। কেমন মেয়র চাই? কী কাজ করবেন মেয়র এলাকাবাসীর জন্য, তার ইশতেহারই বা কী?
এসব তর্কে তেল বা ঘি ঢেলে আড্ডা উসকে তুললেন ফরহাদ। তিনি খোদ পৌরসভার গাড়িচালক। দাবি করে বলে উঠলেন, ‘২০১১ সালে যখন বর্তমান মেয়র ক্ষমতা নিলেন, তখন পৌরসভার অনেক কর্মীকে তিনি বিদায় করে দিলেন। তাদের আর চাকরি থাকলো না। এটি কেমন বিচার ছিল তার! একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন তিনি। এ কাজ করলেন কী করে!’
তার এ কথায় পাশ থেকে এলো বিরোধিতা। নাম না জানা এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি চিৎকার করে উত্তর দিলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির মেয়র যেটুকু কাজ করেছেন- সবই তার নিজ যোগ্যতায়। বলা সহজ, কিন্তু করা কঠিন। এবারও লড়াই হবে ভোটে’।
কথাগুলো বলেই স্থান ত্যাগ করলেন তিনি।
ওই চায়ের দোকানে বসে থাকা ব্যবসায়ী আবু কালাম ও কৃষক মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পৌরসভায় মাদকের একটা প্রভাব আছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাদক নিরসনের ইশতেহার দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের চাওয়া, সুখ-দুখে পাশে থাকার মেয়র। সেই সঙ্গে মেয়রকে থাকতে হবে এলাকায়, ঢাকায় নয়’ ।
‘আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তবে কোনো দিন নির্বাচিত হতে পারেননি। তিনি খুব মিশুক লোক। মানুষ তাকে বেছে নেবেন বলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি’- বলেও মন্তব্য তাদের।
এখানে আড্ডা জমে ওঠার আগে কথা হয় ২নং ওয়ার্ডের আওতাধীন খালিস্ট গ্রামের চা দোকানি মিলনময় দাশের সঙ্গে। তিনি জানান, রাজনৈতিক কৌশলে এ এলাকা তথা পুরো মুন্সীগঞ্জেই আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক পিছিয়ে। এটি তো পুরো দেশেরই চিত্র- এমনও মন্তব্য করেন তিনি।
তার আগে ১নং ওয়ার্ডের ফলপট্টির একটি ফলের দোকানের মালিক মো. জয়নাল বলেন, ‘ভোট দিতে যাবো সপরিবারে’।
ওই ওয়ার্ডের লাল মিয়া দর্পণ বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না। যারা এখন পাওয়ার দেখানোর চেষ্টা করছেন, তারাও তো জনপ্রিয়। এটি বুঝে কাজ করলেই মুন্সীগঞ্জের শান্তি-উন্নতি’।
৪নং ওয়ার্ডের হজরত আলী জানান, একটা ভালো ভোটের অপেক্ষায় আছেন তারা। এ দিনটা তো সব সময় আসে না।
এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন হাজি মো. ফয়সাল বিপ্লব এবং বিএনপি থেকে লড়ছেন বর্তমান মেয়র এ কে এম ইরাদত মানু। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম ছাড়াও আরও রয়েছেন ইসলামী হেফাজতের মো. মহিউদ্দিন বেপারী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপ্লব। তার ঝুলন্ত পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। সে তুলনায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মানুর তেমন কোনো পোস্টারই দেখা গেলো না! অন্যদিকে রেজাউল ইসলাম সংগ্রামের পোস্টারে প্রচারণা থাকলেও তেমনভাবে তার উঠান বৈঠক জমছে না বলে জানান স্থানীয়রা। একই অবস্থা ইসলামী হেফাজতের মো. মহিউদ্দিন বেপারীর।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফজলে আজিম মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি, যেন কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক দু’টি অভিযোগ করেছেন। তাদের নাকি প্রচারণায় বাধা এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রথম অভিযোগ তাদের নির্দিষ্ট থানায় জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা জানাননি এখনও। আর দ্বিতীয় অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রচারণায় সবাই নামতে পারবেন। আমরা সবাইকেই সমানভাবে দেখি।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার আয়তন ১০ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ৪৫ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৯৬ জন এবং নারী ভোটর ২২ হাজার ৩৩২ জন। ভোটকেন্দ্র- প্রাথমিক হিসেবে ২৬টি। ১৯৭২ সালে এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৩ সালে ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। পৌর এলাকার শিক্ষার হার ৬৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
আইএ/এএসআর
** ‘সবার আগে দোকান থেইকা টিভি সরাইসি’
** মেগাসিটি হবে মুন্সীগঞ্জ!