মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে: প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছেন হাজি মো. ফয়সাল বিপ্লব। ধানের শীষে লড়ছেন বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র এ কে এম ইরাদত মানু।
এদিকে ‘আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী’ বা স্বতন্ত্র মোবাইল ফোন প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রেজাউল ইসলাম সংগ্রামও রয়েছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে। তিনি ‘চেতনায়’ আওয়ামী ব্যক্তিত্ব। আর পাখা মার্কা নিয়ে এ খাতায় আরও নাম তুলেছেন ইসলামী হেফাজতের মো. মহিউদ্দিন বেপারী।
এই চারেই মুন্সীগঞ্জ পৌর নির্বাচন। এছাড়া রয়েছেন সাধারণ কাউন্সিলর পদে (৯টি ওয়ার্ড) ৩৯ জন আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (২টি ওয়ার্ড) পদে চারজন করে আটজন প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের ফয়সাল বিপ্লব বঙ্গবন্ধুর চিফ সিকিউরিটি গার্ড মো. মহিউদ্দিনের ছেলে। আওয়ামী লীগের জন্য তার বাবার অবদান অনেক। এছাড়া বিপ্লব নিজে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ সম্পাদক। তিনি গতবারের পৌর নির্বাচনে হেরে যাওয়া নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। ১২শ’ ভোটে হেরেছিলেন বিএনপির ইরাদত মানুর কাছে।
মো. ফয়সাল বিপ্লব
তবে সে হারের পেছনে দলীয় কোন্দল ছিল বলে নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন বিপ্লব। বাংলানিউজকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যখন আমি হারি, তখন মহাজোট ছিল। তাদের প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। আমার চাচা আওয়ামী লীগের বড় নেতা। তিনি বাধ্য হয়েই সে সময় মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে আমি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ি। শেষে মাত্র ১২শ’ভোট ব্যবধানে হেরে যাই’।
তিনি দাবি করেন, এবার জোয়ার তার পক্ষে, সুতরাং জয় তার হবেই। কারণ, তিনি এলাকায় জনপ্রিয়, সঙ্গে দক্ষও।
নির্বাচনে তিনি বিএনপির ইরাদত মানুকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন। উড়িয়ে দিয়েছেন সংগ্রামের কথা।
২নং ওয়ার্ডের ভোটার এম রহমান। তিনি জিয়াউর রহমানের জাগোদল করতেন। এখন খালেদা জিয়ার রাজনীতি তার পছন্দ না। ফলে বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে নেই। মুন্সীগঞ্জ মাছ বাজার এলাকায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘মানুষ চান শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন। ঠিকমতো নিজের ভোটটা দিতে পারলেই হলো। এটিই এখন বড় বিষয় এখানে’।
রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম
তিনি দাবি করেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপ্লবের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এদিক দিয়ে প্রথম হবেন তিনি আর দ্বিতীয় হবেন পাখা মার্কার মহিউদ্দিন। ’
ধানের শীষের প্রার্থী বর্তমান মেয়র এ কে এম ইরাদত মানু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার তো পোস্টার থাকে না। কারা যেন ছিঁড়ে ফেলেন। প্রচারণার সময় বিএনপির সিনিয়র নেতা, পাঁচবারের সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুল হাইসহ ধাওয়া খেয়েছি। ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছি। চাই শুধু একটাই বিষয়- আগামী ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) মানুষ যেন ঠিক মতো নিজের ভোটটা দিতে পারেন। এতেই ফয়সালা হয়ে যাবে’।
ইরাদত মানু বলেন, ‘আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আমি যদি ফের নির্বাচিত হই, সব অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবো। পৌরসভাকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যাবো’।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম সংগ্রামও ওই একই দাবি জানালেন। বললেন, ‘সুষ্ঠুভাবে মানুষ যেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে- নির্বাচন কমিশন (ইসি) সে ব্যবস্থা যেন করে’।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলা হয় তাকে- এ প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে সংগ্রাম বলেন, ‘আমি তো মনোনয়নপত্র দলে জমাই দিতে পারিনি। বিপ্লব গ্রুপের জন্যই এটি সম্ভব হয়নি। আবার তারাই আমাকে বিদ্রোহী আখ্যা দিচ্ছে’।
বর্তমান মেয়র এ কে এম ইরাদত মানু
কারো মনোনয়নপত্র যদি দলে জমাই না পড়ে, তো সে কীভাবে বিদ্রোহী হলো এ প্রশ্নও রাখেন সংগ্রাম। নিজেকে স্থানীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিপ্লব ও মানু- ঢাকার লোক। তারা যাওয়া-আসার মানুষ। কিন্তু আমি এখানকারই। এখানেই আমার সব। তাই উন্নয়নে আমাকেই চাই’।
ইসলামী হেফাজতের মো. মহিউদ্দিন বেপারী পাখা মার্কার কিছু পোস্টারিং করলেও তাতে নেই তার ছবি। স্থানীয়রা মনে করছেন, নিজের ‘নামকে পরিচিত’ করতেই তার ভোটে দাঁড়ানো।
১০ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌর এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রচারণা ও দাপট বেশি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। প্রচারণায় সব ক্ষেত্রে এগিয়ে তিনিই। তারপরে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংগ্রাম। তবে তার উঠান বৈঠক নেই- শুধু পোস্টার এবং নির্দিষ্ট বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া।
এছাড়া পোস্টার লাগিয়েও রাখতে না পারা বিএনপি প্রার্থী টুকটাক জনসংযোগে নামছেন। সব মিলিয়ে ভোটারদের বক্তব্য ‘মনোনয়ন ও চেতনার’ আওয়ামী লীগ এবং ‘কোণঠাসা বিএনপির’ মধ্যে হবে লড়াই এবার। আর কাউন্সিলরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভালো মানুষকেই তারা বেছে নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
আইএ/টিআই/এএসআর
** মেয়র ঢাকার, না এলাকার তা ‘ফ্যাক্টর’
** ‘পৌর ভবনে সুখ-দুখের আলাপকারী চাই’