ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

মিরকাদিম থেকে সৈয়দ ইফতেখার আলম

লক্ষ্য-স্বপ্ন ‘এক’, দৃষ্টি ‘ছয়’

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
লক্ষ্য-স্বপ্ন ‘এক’, দৃষ্টি ‘ছয়’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরকাদিম পৌর এলাকা ঘুরে: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি আধুনিক হাসপাতাল। যা পুরো জেলার মধ্যেই অন্যতম চিকিৎসাকেন্দ্রে রূপ নেবে।

এলাকায় খেলাধুলার ঐতিহ্য অনেক দিনের। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার, মাঠ-ঘাট ছাড়া নেই কোনো স্টেডিয়াম। প্রতিষ্ঠিত হবে তাও। গড়ে উঠবে বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে শিশু থেকে তরুণ-বৃদ্ধ সবাই যেতে পারবেন। এছাড়া রাস্তা-ঘাট আরও উন্নত হওয়ার পাশাপাশি মাদক নির্মূল করা হবে কঠোর হাতে।

মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের সবারই একই কথা। যেন লক্ষ্য-স্বপ্ন এক, দৃষ্টি ‘ছয়’। ছয়ের অর্থ হলো, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসেব বলছে, এ  মেয়র প্রার্থী ছয়জন। তাদের লক্ষ্য-স্বপ্ন উন্নয়নের। তার আগে মেয়র হিসেবে নিজেকে পৌর পিতার আসনে বসানোরও লক্ষ্য-স্বপ্ন।

ঢাকা থেকে দূরত্ব তেমন একটা নয়, তবুও এ পৌর এলাকার উন্নয়ন খুব একটা চোখে পড়ে না।

২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে প্রায় ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে মেয়র নির্বাচিত হন শহীদুল ইসলাম শাহীন। ওই সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এবার নির্বাচনের আগে আগে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। স্বল্প সময়ে দলের টিকিটও নিজের করে নিয়েছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘মানুষকে মানুষ হিসেবে সব সময় বিবেচনা করেছি, সে জন্যই আমি মেয়র। আসন্ন নির্বাচনেও আশা রাখি, মেয়র হয়ে আসবো। কারণ, মানুষ আমাকে চান- এতে কারোরই কিছু করার নেই। মানুষের ভালোবাসাই আমার শক্তি। দলও সে কারণে মনোনয়ন দিয়েছে আমাকে’।

নির্বাচিত হলে উন্নয়নের লক্ষ্য কী- জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হতে যাচ্ছে। আমি ফের মেয়র হয়ে এলে এই কাজ দ্রুত হবে। খেলাধুলার জন্য ভালো কোনো স্টেডিয়াম নেই। ২০১১ সালে মেয়র হওয়ার পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে স্টেডিয়ামের বিষয়টি নিশ্চিত করিয়েছি। পরে একনেক তা অনুমোদন দিয়েছে’।

‘এছাড়া তৈরি করবো বিনোদন কেন্দ্র। মানুষের মৌলিক অধিকার-বিনোদনের বিষয়টি দেখা পৌরসভার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট আরও উন্নত এবং চওড়া হবে। যোগাযোগ বাড়বে’।

শহীদুল ইসলাম শাহীন দাবি করেন, তার সময় এলাকায় কোনো মাদক ছিল না, এবার নির্বাচিত হলেও থাকবে না।

বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে মাঠে আছেন মো. সামছুর রহমান। তিনিও বললেন, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, বিনোদন কেন্দ্রের কথা। সঙ্গে যুক্ত করেন কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি।

প্রশ্ন ছিল- ‘এমন প্রতিশ্রুতি তো অন্য প্রার্থীরাও দিয়েছেন, আপনার ইশতেহারে পার্থক্য কী?’ জবাব দিলেন এভাবে, ‘যিনি এখন রানিং মেয়র তিনি এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দায়িত্বে তো ছিলেন গত পাঁচটি বছর। কই কিছুই তো হলো না! হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, বিনোদন কেন্দ্রের কোনোটাই মিরকাদিমে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি তিনি’।

এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে ‘লক্ষ্য-স্বপ্নের’ বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সামছুর রহমান।

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব মনছুর আহামেদ কালাম মিরকাদিম পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, পাননি। ফলে বিদ্রোহী হয়েছেন। তার সঙ্গেও কথা হয় বিস্তর। তার দাবি, ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করা লোক তিনি। মিরকাদিমের উন্নয়ন তাকে দিয়েই হবে।

লক্ষ্য-স্বপ্নের প্রসঙ্গে ওই একই বক্তব্য মনছুর আহামেদ কালামেরও।

জাতীয় পার্টির (জেপি-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন রেনুকে অভিজ্ঞ লোক হিসেবেই চেনেন স্থানীয়রা। তিনি মিরকাদিম পৌরসভার প্রথম মেয়র। এবারের ভোটের লড়াইয়েও রয়েছেন।

আবারও যদি সুযোগ পান, তবে পৌরসভা নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা কী, বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে হোসেন রেনু শোনান সেই হাসপাতাল, স্টেডিয়াম ও বিনোদন কেন্দ্রের চিরচেনা হয়ে ওঠা গল্প।

মেয়র প্রার্থী আছেন আরও দুইজন। তবে সরেজমিনে তাদের দেখা মেলেনি। স্বল্পমাত্রায় তাদের দৌড়ঝাঁপ- বলছেন ভোটাররা। তারা হলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল গফুর মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জামান হোসেন।

জানা যায়, গফুর মিয়া এক রকম ঠেকায় পড়ে প্রার্থী হয়েছেন। জামান হোসেনও ঠিক তাই। এ নির্বাচন তাদের ‘নামকে পরিচিত’ করার ক্ষেত্র বলেও বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটার মন্তব্য করলেন।

‘সবাই তো একই ধরনের উন্নয়নের কথা বলছেন, একজন ভোটার-বাসিন্দা হিসেবে নিজ এলাকা মিরকাদিমকে কেমন দেখতে চান?’ এ প্রশ্ন তুলে অধির চন্দ্র রায়ের ফার্মেসি দোকানে চা হাতে ঝড় তোলার চেষ্টা। প্রথম বক্তা হিসেবে অধির রায় (৭নং ওয়ার্ডের ভোটার) বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাহীন প্রচারণায় বেশি। অন্যরাও কম যাচ্ছেন না। তাই তো এখানকার নির্বাচনী আমেজ বেশ কড়া। আর উন্নয়নের কথা যদি বলতে হয়, তো আমার মতে, অভিজ্ঞ প্রার্থীকেই এগিয়ে রাখবেন ভোটাররা’।

৫নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিনের কথা সোজাসাপ্টা। তিনি বললেন, ‘আমাদের পৌরসভায় এখন মানুষের একটাই টার্গেট- ওই নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো যাকে দিয়ে পূরণ হবে তাকেই নির্বাচিত করা’।

হাতে চা নেই তাতে কী, ভিড় করে শোনার লোকের অভাব হলো না। রীতিমতো ছোট জমায়েত বনে গেলো। তারা কেবলই নির্বাচনী অালোচনার দর্শক-শ্রোতা। একদম কোণায় গিয়ে বসা বৃদ্ধ চা শেষে নিজের পরিচয় গোপন করে কথা বলতে শুরু করলেন। কথার মাঝপথে নাম জিজ্ঞেস করায় বিরক্ত হলেন বোঝা গেল।

কাজী আতাউর রহমান, তার নাম। পুনরায় তার কথা শুরু, ‘আরে রাখেন মিয়া- অন্য সব প্রার্থীর পক্ষে একটা লোক অাছে! আওয়ামী লীগের পক্ষেই তো সব লোকজন। সুতরাং কাজ হলে আওয়ামী লীগকে দিয়েই হবে। মনে রাখবেন’।

কথা শেষে কাজী আতাউর জানালেন, তিনি স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

তার কথায় বিরোধিতা এলো না বটে। কিন্তু ওষুধ কিনতে আসা রেশমা বাংলানিউজকে বললেন, ‘প্রচারণা-লোকজন বেশি থাকলেও এক পক্ষে ভোট হবে না। এ জন্য একটাই চাওয়া- মানুষ যেন উৎসব করেই নিজ ভোটটা দিতে যেতে পারেন’।

নির্বাচন এবং প্রার্থী নিয়ে মানুষের ভাবনা নানামুখী। কারো জন্য উৎসব, কারো প্রাধান্য উন্নয়নে, কারো দৃষ্টি সেবা পাওয়ায়, কারো বা শুধুই ব্যক্তিগত পছন্দের প্রসঙ্গ।

যার যেমনই হোক আগামী ৩০ ডিসেম্বর বুধবারের জন্য প্রতীক্ষা মিরকাদিমের সব ভোটারের জন্যই সমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আইএ/এএসআর

** ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই!
** ‘মনোনয়ন’ ও ‘চেতনার’ আ’লীগ এবং ‘কোণঠাসা’ বিএনপির লড়াই
** মেয়র ঢাকার, না এলাকার তা ‘ফ্যাক্টর’
** ‘পৌর ভবনে সুখ-দুখের আলাপকারী চাই’
** মেগাসিটি হবে মুন্সীগঞ্জ!
** ‘সবার আগে দোকান থেইকা টিভি সরাইসি’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।