শেরপুরের শ্রীবরদী পৌরসভা থেকে ফিরে : ‘৩০ তারিখের পর কেরা খাওয়াইবো। অহন বেশি কইরা খাইয়া লইন,’ বলেই আলাপ জমার আগেই চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন সুলতান।
তার কথার পর পরই বয়োবৃদ্ধ মোহাম্মদ আলী হাসিমুখেই জবাব দিলেন, ‘যে পার হইবো সেইতো খাওয়াইবো। অহন বেশি কইরা চা-পান খিলাই লও। ’
বয়সের ভারে ন্যূব্জ আলী হাঁটেন লাঠিতে ভর করে। ভোটের সময় ঘনিয়ে আসায় প্রতিদিনই নিয়ম করে বিকেলে উপজেলার হাসপাতাল মসজিদ গেটের কোণায় রিপনের চায়ের দোকানে আসেন তিনি।
এখানে বসেই সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেন পৌর এলাকার তাঁতিহাটা গ্রামের এ বাসিন্দা। ভোটের আলাপ তুলতেই বললেন, ‘সরকার দলের প্রার্থীরেই তো ভোট দিতে হইবো। হের দ্বারাই কাম হইবো। ধানরে দিলে ভোটটাই নষ্ট হইবার পারে। ’
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে এ চায়ের দোকানে জমে ওঠে ভোটের আড্ডা। ছোট্ট বেঞ্চে ঠাসাঠাসি করে বসা আরেক অশীতিপর বৃদ্ধ লালু মিয়া থাকেন পৌর এলাকার সাতানি মুথুরাদী এলাকায়।
নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে চা-পান খাচ্ছেন কেমন? জানতে চাইলে হাসিমুখে বলেন, ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর কয়েক খিলি পান খিলাইতাছি। ’
খানিক সময় চুপ থাকা মোহাম্মদ আলী কথায় সায় দিলেন এভাবে, ‘পাবলিক সবারডাই খায়। ভোটের হাব-ভাব কইতাছে, ভোটটা দিবো নৌকাত। ’
তাদের সঙ্গে ভোটের আলাপ গড়াতেই এক এক করে আসতে শুরু করলেন হামিদুল, আলতাফসহ বেশ কয়েকজন। ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক দিলেন তারাও।
‘মুরুব্বীগর কথা ঠিক। নির্বাচন জইম্যা গেছে। এইহানো নৌকার সাপোট বেশি’ বলছিলেন আলতাফ।
চায়ের কাপে ভোটের আড্ডায় ঝড়ও তুললেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য পরিচিত এ তরুণ বয়সী ভোটার বলেন, ‘পরশু দিন সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) অনুষ্ঠানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুল হাকিম যায় নাই। ’
‘ভোটারগর প্রশ্নের উত্তর দিবার পাইতো না বইল্ল্যাই অনুষ্ঠান থেইক্যা সইরা রইছিল। অনেক দিন পদটা ধইরা রাখছে, আর না। এইবার বুঝবো ভোটের ঠেলা। ’
এ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা মাইকিংয়ের দাপটও দেখা গেলো ওই বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে।
উপজেলা সদর থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অলি-গলিতেও শোভা পাচ্ছে রশিতে টানানো তাদের নির্বাচনী পোস্টার। দিন-রাত একাকার করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার পিঠা বিক্রেতা আবুল কালামের (৫০) সঙ্গে দেখা হলো ব্যস্ততম এ বাজারেই।
নির্বাচনের খবর কী, জিজ্ঞাসা করতেই উচ্চকন্ঠে বললেন, ‘ইলেকশন বিরাট জমছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী’র সঙ্গে তাগোর দলের নেতা-কর্মীগর গোস্বাগুস্বি ছিল। অহন সবাই একখানে হইয়া নির্বাচন করতাছে। বিএনপি’র প্রার্থী এইবার মনে হয় সুবিধা করতে পারবো না। ’
কালামের সঙ্গে আলাপ করে হেঁটে একটু সামনে এগোতেই একটি ওষুধের দোকানে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীদের নিযে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতে উঠতে দেখা গেলো দোকানি আব্দুর রউফ, সাদা মিয়া, মোখলেছুর রহমানসহ কয়েকজনকে।
তাদের মধ্যে সাদা মিয়া বললেন, ‘মুহে মুহে সবাই পাস। যার তকবিরে আছে হেইতো পাস করবো। মনে মনে প্রার্থী ঠিক কইরা রাখছি। ৩০ ডিসেম্বর সহালেই পছন্দের প্রার্থীরে সিল মারমু। ’
তিন মেয়র প্রার্থী, ভোটযুদ্ধ কী ত্রিমুখী হবে কি-না, মুখ থেকে প্রশ্ন বের হতেই দোকানি আব্দুর রউফ বলেন, ‘নারিকেল ধানের ভোট নষ্ট করবো। কিন্তু লড়াই অইবো নৌকা আর ধানে। ’
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীবরদী পৌরসভায় ওয়ার্ড ৯টি। এখানে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৭৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ২৯০ জন এবং ৯ হাজার ৪৭১ জন নারী ভোটার। এ নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ১১ জন প্রার্থী।
মেয়র পদে ভোটে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবু সাঈদ (নৌকা), বিএনপির বর্তমান মেয়র আব্দুল হাকিম (ধানের শীষ) ও বিএনপি’র বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু রায়হান মো. আল বেরুনী (নারকেল গাছ)।
কিন্তু এখানে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যেই- এমনটি জানালেন স্থানীয় ভোটাররা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এমএ/এএসঅার
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!