ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

নির্বাচন

চৌগাছা থেকে মাহমুদ মেনন

চৌগাছায় চাপা পরিবেশ, মোটরবাইক নিষিদ্ধে খুশি

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
চৌগাছায় চাপা পরিবেশ, মোটরবাইক নিষিদ্ধে খুশি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চৌগাছা (যশোর) থেকে: চৌগাছায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। যশোরের সবগুলো পৌরসভায় ঘুরে যে ভোটের উচ্ছ্বাস দেখা গেলো, চৌগাছায় তা অনেকটাই ম্লান।

একটা চাপা পরিবেশ। উত্তেজনা বলা যাবে না, তবে গুমোট ভাব। ছোট্ট দেড় বর্গ কিলোমিটারের এই পৌরসভায় সকাল থেকে ভোট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কয়েক জায়গায় ব্যর্থ হতে হলো। জামতলা মোড়ে চায়ের দোকানে কিছু মানুষ রয়েছেন বটে। কিন্তু তাদেরও আলোচনায় ভোট নেই।

এর মধ্যে একজন এলেন, এর সঙ্গে বুক মেলান, ওর সঙ্গে করমর্দন। হাতে সবগুলো আঙুলে স্বর্ণরঙা আঙটি। কালো লেদারের জ্যাকেট, চাপা জিন্স। ভাবে-ভঙ্গিতে মনে হলো প্রার্থী হবেন বুঝি। তবে যাদের সঙ্গে বুক-গলা মেলালেন তাদের মাঝে এতেও উচ্ছ্বাস মিললো না। জানা গেলো, তিনি একজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই। তবে কাজ হলো। এই প্রার্থীর ভাই দোকান ছাড়লে ভোটের আলোচনা শুরু করা গেলো। সবারই এক কথা, কেউ কিছু বলতে চান না। চৌগাছায় ভোটের দিন অবধি বড় কোনো অঘটন না ঘটুক এটাই সবার প্রত্যাশা। অঘটনের প্রশ্ন কেন আসছে? সে প্রশ্নে অবাক হলেন উপস্থিত প্রায় সকলেই।

তার কারণ আছে। এরই মধ্যে, ভোটকে কেন্দ্র করে চৌগাছা কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠেছে। বাংলানিউজ যখন চৌগাছায়, তখন যশোর শহরে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন এখানকার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরুদ্দীন আল মামুন হিমেল। এটি তার পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন। এর আগের দিনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম সাইফুর রহমান বাবুল সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ঘটনার পেছনটাও জানা গেলো স্থানীয়দের মুখে। গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে এই বাজারে প্রচারণার একটি ক্যাম্পেইন নৌকা প্রতিপক্ষ পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ এনে যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে একটি পক্ষ। আর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মলন করে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় অপরপক্ষ।

এই সংবাদ সম্মেলন-পাল্টা সংবাদ সম্মেলন চললেও চৌগাছায় মূল টেনশনের ভিত আরও পিছনে। গত উপজেলা নির্বাচনে এখানে সহিংসতার কথা ভোলেনি এলাকাবাসী। সেবার ভোট নিয়ে যা কিছু হয়েছে, অবস্থা-পরিস্থিতি সে দিকেই যাচ্ছে বলে মত দিলেন একজন। তবে অন্যজন শোনালেন কিছু আশার কথা। তার বিশ্বাস ‘এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হতি হবি’। কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে ঘোষণা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ডেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যশোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। দু'জনই উপস্থিত থেকে বলে দিয়েছেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সকল ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত।

এতে কিছুটা আস্থা এসেছে, কিন্তু ভীতি কাটেনি চৌগাছাবাসীর।

নয়টি ওয়ার্ডে সাড়ে চৌদ্দহাজার ভোট। সেই ভোট ভাগাভাগি হবে চার জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে। আর কাউন্সিলর প্রার্থী এখানে অনেক। ৪ নং ওয়ার্ডের একজন জানালেন, এই ওয়ার্ডে আড়াই হাজার ভোট। আর কাউন্সিলর প্রার্থী ছয় জন। যার মধ্য থেকে মাত্র একজন বিজয়ী হবেন। আর সব মিলিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ২৫ জন। যাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন তিন জন। নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছন সাত জন। যার মধ্য থেকে তিন জন নির্বাচিত হবেন।

যশোরের অন্য পৌরসভাগুলোতে যেভাবে ভোটের প্রচার-প্রচারণা দেখা গেছে, চৌগাছায় তেমনটা দেখা যায়নি। তবে প্রার্থী বেশি হওয়ায় সাদাকালো পোস্টারে ছেয়ে আছে। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ একজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীকে জনসংযোগে দেখা গেলো।

মনে মনে অবশ্য চৌগাছাবাসীর একটা চাওয়া বা প্রত্যাশা রয়েছে। তা হচ্ছে নিরপেক্ষ ভোট। একজনতো বলেই ফেললেন, আমি নৌকার সমর্থক। কিন্তু আমিও চাই নিরপেক্ষ ভোট। আমি ধারণা করছি, সরকারও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চায়। প্রশাসনের কথায় সে আস্থাই আমরা পাচ্ছি।

ভোট সুষ্ঠু হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন আরও একজন। তিনি নিজেকে বিএনপির সমর্থক বলেই পরিচয় দিলেন।

প্রশাসন নির্বাচনী এলাকায় দুই দিন আগে থেকে মোটরবাইক নিষিদ্ধ করে দিয়েছে, আর ভোটের দিন রয়েছে অন্য মোটরযানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা। এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ও সন্ত্রাসমুক্ত ভোটের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন চৌগাছাবাসী। এতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধ করা যাবে বলেই তাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫/আপডেট ১৪৪৯ ঘণ্টা
এইচএ/এমএমকে/

** ভোট যত বেশি, নির্বাচন তত সফল
** দলীয় প্রতীক এখানে আশীর্বাদ
** মানবিক গুণের প্রার্থী হলে বেশি ভোট
** প্রতীক দেখে সিল দেবে, মিছিল ভোটের ঐতিহ্য
** আউশের চিড়া ও তার কারিগরের গল্প
** প্ল্যাটফর্মে বস্তা-বস্তা ডাক, ডিজিটালে চাপ কমছে
** সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিলম্বের কথা জানতেও দেড় ঘণ্টা বিলম্ব

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।