ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

নির্বাচন

পৌর নির্বাচন

বগুড়ায় প্রচারণায় পিছিয়ে নেই নৌক‍া, ধানের শীষ

বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
বগুড়ায় প্রচারণায় পিছিয়ে নেই নৌক‍া, ধানের শীষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সারিয়াকান্দি থেকে ফিরে: বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর সভায় মেয়র নির্বাচনে পিছিয়ে নেই নৌকা, ধানের শীষের প্রার্থীরা। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন উভয় প্রার্থীর‍া।



বৃহস্পতিবার (২৪ডিসেম্বর) বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে গেলে মেয়র প্রার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।

নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমন। নির্বাচনে তাকে বিএনপি, আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ মোট পাঁচজন প্রার্থীকে মোকবেলা করতে হচ্ছে। তবে বিদ্রোহীদের তিনি নৌকার জন্য নো ফ্যাক্টর মনে করছেন। ধানের শীষের সঙ্গে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

বর্তমান মেয়র টিপু সুলতান। মেয়র পদে বিএনপির দলীয় প্রার্থী। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। তবে এ জন্য তাকে এবার অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে। কেননা যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালত তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করায় দুইদিন আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামেন। নির্বাচনী প্রচারে নামতে বিলম্ব হওয়ায় এক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণায় তার থেকে নৌকা প্রতীক এগিয়ে রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এই পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান মেয়র টিপু সুলতান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমন নৌকা, স্বতন্ত্র ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ ফারাজী চামচ ও একই দলের উপজেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ সরদার জগ বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জালাল উদ্দিন নারিকেল গাছ প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার মোঃ খোরশেদ আলম মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদের মধ্যে যাচাই বাছাইয়ের দিনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। পরে উচ্চ আদালত তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। এরমধ্যে পেছনে পড়েন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী। উচ্চ আদালতে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করার পর ২২ডিসেম্বর তিনি প্রতীক বরাদ্দ পান। এরপর থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নামেন।

বিএনপির দলীয় মেয়র প্রার্থী টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, তার মেয়াদে এই পৌরসভায় ৬ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, পয়নিস্কাশন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। এবার জয়ী হতে পারলে পৌরসভা ভবন, স্থায়ী বাজার বসার স্থান ও পরিকল্পনা অনুযায়ী  এই পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় উন্নীত করা হবে।

শতভাগ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী টিপু সুলতান বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয় ভেবে আবোল তাবোল বকছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমন বাংলানিউজকে বলেন, এটি নামেই পৌরসভা। এখানে কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। নেই রাস্তাঘাট। ড্রেনেজ ব্যবস্থার চিত্র একই। পৌরসভা ভবন নেই। স্থায়ী বাজার নেই। বর্তমান মেয়রের অযোগ্যতার কারণে এই পৌরসভায় কোনো উন্নয়ন হয়নি।

তিনি বলেন, প্রায় ২৩ বছর মাঠের জায়গা ব্যবহার করে হাট বাজার বসানো হয়েছে। সেখানে মাদকের আখড়া গড়ে উঠেছিলো। সেটি আমি নিজ উদ্যোগে বন্ধ করেছি। বর্তমান সরকার দলীয় এমপি আব্দুল মান্নানের অর্থায়নে মাঠের খোলা জায়গায় প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়। এছাড়া স্থানীয় যুবকদের মাদকের ছোবল থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।

তিনি আরো জানান, পৌরসভার লোকজন উন্নয়ন চায়। আর তারা জানেন আওয়ামী লীগ ছাড়া এখানে উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেননা এলাকার লোকজন বর্তমান এমপি আব্দুল মান্নানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখছেন। এখন এখানে তাদের উন্নয়নের জন্য সরকারদলীয় মেয়র দরকার। তাই পৌরবাসী নিজেদের প্রয়োজনেই এবার নৌকা প্রতীককে জয়যুক্ত করবেন।

বিএনপির প্রার্থীর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে শাহী সুমন বলেন, যেখানে নৌকা প্রতীকের জয় সুনিশ্চিত সেখানে হুমকি ধামকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং বিএনপির প্রার্থী ও তার লোকজন আমার নির্বাচনী নেতাকর্মীদের নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এসব হুমকি ধামকি মাথায় নিয়ে তিনি নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, নৌকার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোনো ফ্যাক্টর নয়। কেননা তারা এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন। বর্তমানে তারা দলের কেউ না। দলের কোনো নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে নেই। তাই তার জন্য তারা কোনো সমস্যা নয় বলে তিনি জানান।

স্বতন্ত্র ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী আব্দুর রশীদ ফারাজী বাংলানিউজকে জানান,  প্রায় ১৬ বছর আগে এই পৌরসভা হয়। অথচ ভবন নেই। রাস্তঘাটের বেহাল দশা। কোনো উন্নয়ন নেই। স্থায়ী বাজার নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থার করুণ চিত্র। জনগণ তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে তিনি এসব সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান।

স্বতন্ত্র ব্যানারে আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরদার বাংলানিউজকে বলেন, জনগণ তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে তিনি পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা দেবেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী ও তার লোকজন আব্দুল হামিদ সরদারের নিবাচনী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এমবিএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।