ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

শ্রীবরদী থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

শেরপুরের শ্রীবরদী কী জামালপুরে?

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
শেরপুরের শ্রীবরদী কী জামালপুরে? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা থেকে ফিরে: পুরান নাম ‘শম্ভুগঞ্জ’। জমিদারি জামানায় স্থানীয় এক রাজার কন্যাকে প্রজারা ডাকতো ‘শ্রী বড় দিদি’ নামে।

লোকশ্রুতি মতে, সেই নাম থেকেই এর নামকরণ হয় শ্রীবরদী। ৩২ বছর আগেও এটি ছিল জামালপুরের একটি থানা।

গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন আকর্ষণ সম্পন্ন এ জনপদ ১৯৮৩ সালে শেরপুর জেলার একটি উপজেলায় উন্নীত হয়। এর মাত্র এক বছর আগে ১৯৮২ সালে এখানে যখন জিয়া সরণি গেট নির্মাণ হয় তখন এর মহকুমা ছিল জামালপুর। কিন্তু গত ৩৩ বছর ধরেই এ গেটে লেখা আছে ‘ধন্যবাদ আবার আসবেন, শ্রীবরদী জামালপুর’।

৩২ বছরেও এ গেটের দিকে তাকাননি কেউ। সংশোধনও করেনি জামালপুরের বদলে জেলার নাম শেরপুর। মলিন, ধূসর এ গেটে এখনো জামালপুরের উপজেলা হিসেবে শ্রীবরদীর নাম দেখে যারপরেনাই ভড়কে যান এখানে নতুন আসা কেউ।

গত মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে শ্রীবরদী উপজেলার চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে দেখা গেলো এমন চিত্রের।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর শ্রীবরদীতে মুক্তিকামী মানুষ সংগঠিত হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এটি ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের আওতায়। যেখানে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন জিয়াউর রহমান। এরপর ১৯৮২ সালে তার নামে এখানে নির্মিত হয় জিয়া সরণি গেট। পরে ২৪ মুক্তিযোদ্ধার প্রাণের বিনিময়ে মুক্ত হয় এ উপজেলা।

শেরপুর জেলা সদর থেকে পাকা সড়ক ধরে মাত্র ১৮ কিলোমিটার পেরুলেই শ্রীবরদী উপজেলা। এ উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় এ গেটের আরেক পাশে লেখা আছে ‘খোশ আমদেদ, শ্রীবরদী জামালপুর’।

নতুন জেলা হিসেবে শেরপুরের নাম না লিখে জামালপুরই এখনো বহাল তবিয়তে থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও এ বিষয়টি গা সওয়াই হয়ে গেছে।

তারা জানান, অনেক সময় রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসলে এমন কিছু কাজ করা হয় যেখানে জনগণের অভিমতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ গেটটি ছিল এ রকমই। গেটটিতে এখনো জামালপুর নাম থাকলেও কারো দৃষ্টি নেই এদিকে। দাবি জানিয়েও ফল পাওয়া যায় না।

গেটের পাশেই চা-পানের দোকান দিয়েছেন মামুন খন্দকার নামে এক তরুণ। জেলার নাম শেরপুরের বদলে এখনো জামালপুর কেন? উত্তরে এ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের এটা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই এ ভুল সংশোধনে উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ’।

ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা ষাটোর্ধ্ব দানেছ আলীর বক্তব্যও অভিন্ন। তার ভাষ্যে, ‘নেতারাই এইডা ঠিক করেন না। নজরও দেন না’।  

গেটের এ ভুল সংশোধন করার দায়িত্ব কার? দু’বছর যাবত শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হাবিবা শারমীনের কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি তার চোখে পড়েনি। তবে এটা লেখা থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংশোধন করা হবে। ’ গেটটি পৌরসভার অধীনে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় চৌরাস্তা এলাকার এ গেটে এখনো শ্রীবরদী উপজেলার নামের পাশে জামালপুরের নাম শোভা পাচ্ছে কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি দলীয় স্থানীয় মেয়র আব্দুল হাকিম জানান, ‘এ গেটের ভুল সংশোধনের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাদের নেতার নামে এ গেট করতে চাইবে’।

‘এ কারণেই এটি এখন পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়নি। পৌর নির্বাচনের পর পরই এটা ঠিক করা হবে’ বলেন তিনি।  

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আবু সাঈদ বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই এ গেটটি সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে গেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের পাশাপাশি এ ভুলও সংশোধন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এমএএম/জেডএস

** মতিয়া চৌধুরী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন না, প্রশংসা বিএনপির
** ইলেকশনের হওয়ায় মাইকের আওয়াজ ভালোই লাগে
** ‘আপনি শাহানশাহকে চেনেন না’
** চাকরিজীবীদের ভোট গোপন !
** স্বস্তিতে আ.লীগ, বিদ্রোহীতে কাবু বিএনপি
** ভোটযুদ্ধ সেয়ানে সেয়ানে
** ‘যোগ্য ব্যক্তি দেইখা ভোট দিমু’
** ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’
** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।