ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

নির্বাচন

নরসিংদী থেকে সেরাজুল ইসলাম, মহিউদ্দিন মাহমুদ

প্রয়োজনে পায়ে ধরতে হবে, কারচুপি নয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মহিউদ্দিন মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
প্রয়োজনে পায়ে ধরতে হবে, কারচুপি নয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নরসিংদী থেকে: “হাতে-পায়ে ধরে, প্রয়োজন হলে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হবে। কিন্তু কোনো গ্যানজাম (কারচুপি) করা যাবে না।

নরসিংদী-১ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন”।

নরসিংদী শহরের কোর্ট রোডের নিউ মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডারে চায়ের টেবিলে কয়েকজন যুবক এমন আলাপ করছিলেন।

কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে, পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন আপনারা কারা। সাংবাদিক পরিচয় দিলে অনুরোধ করেন তাদের নাম না লেখার জন্য। এতে তাদের সমস্যা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের ঘাটি খ্যাত নরসিংদী পৌরসভায় এখন পর্যন্ত কখনই বিএনপি থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়নি। সব সময়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এবারও বিজয় ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় এবার কিছুটা সংকটের মুখে পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। কেউ বলছেন ত্রি-মুখী লড়াই হতে পারে। আবার আওয়ামী লীগের লোকজন দাবি করেছেন, তাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। কোনোভাবেই ত্রি-মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

প্রতিমন্ত্রী নির্দেশনা প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিমন্ত্রী শান্তি প্রিয় মানুষ, সকল দলের অংশ গ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন দেখতে চান। এখানে কোনো রকম কারচুপি হোক তিনি চান না।

সে কারণে এখানে প্রথম থেকেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। নির্বাচনও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে। কেউ গোলমালের চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে, জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

প্রয়োজনে হলে না-কি টাকা দিয়ে ভোট কেনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী! এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম তালেব হোসেন বলেন, এসব বিরোধী পক্ষের অপপ্রচার। প্রতিমন্ত্রী এমন কোনো নির্দেশনা দেননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান তার সঙ্গে লড়ছেন, বিএনপির প্রার্থী রাজনীতিতে নতুন মুখ সাইফুল ইসলাম সোহেল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন এমএ কাইয়ুম (মোবাইল)।

এছাড়া জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে সাদেকুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে ফারজানা আক্তার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন ত্রি-মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে নির্বাচনী অফিসে (সেবা সংঘ মোড়) দেখা মেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ভাবি ও প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুশরাত বুবলির। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ খোশ মেজাজেই দেখা গেলো তাকে।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

বুবলি মনে করেন, কামরুজ্জামান মেয়র নির্বাচিত হয়ে অনেক উন্নয়ন করেছে। যা নরসিংদীবাসী ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছে। তিনি নরসিংদীকে সারা দেশের কাছে মডেল শহর করতে চান- এ জন্য এবারও তাকে লোকজন ভোট দিতে চায়।

জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় সাহা বাংলানিউজকে জানান, আমরা মনে করছি এখানে ত্রি-মুখী লড়াইয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হবে। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

নরসিংদী পৌরসভায় নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৮৭ হাজার ২৩ জন ভোটার রয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ৩৭৮ ও মহিলা ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ৬৪৫ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৩৪টি।

যখন নির্বাচনের প্রচারণা দামামা শেষ (সোমবার মধ্যরাতে) তখন নরসিংদী শহরে ঘুরে নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস গুলো জমজমাট দেখা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি তেমন দেখা না গেলেও, মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলো  জমজমাট দেখা গেছে। অন্যদিকে জেলা নির্বাচন অফিসে ভোট কেন্দ্রের মালামাল পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।