জামালপুর: একই মায়ের গর্ভের তিন কন্যা-রাশিদা, রুশনাই ও হনুফা। তিন জনই ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছেন।
তিন বোনের বিয়েও হয়েছে একই ইউনিয়নের পাশাপাশি তিন গ্রামে। কিন্তু বিয়ের পর নানা কারণে তিন বোন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়। তাদের স্বামীদের মধ্যেও এ শত্রুতা দৃশ্যমান!
স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানায়, তিন বোনের মধ্যে ছোট বেলায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। ছোট দুই বোন রোশনাই ও হনুফার আর্থিক অবস্থা কিছুটা খারাপ। তবে বড় বোন রাশিদার আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো। মেঝ বোনের আর্থিক অবস্থা এক সময় ভাল ছিলো। তিনি বিগত দিনে মহিলা সদস্য পদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় তার আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। অবশ্য মেঝ বোনের বসত ভিটাসহ অনেক সম্পদই বড় বোন কিনে নিয়েছেন।
ছোট দুই বোনের অভিযোগ, অর্থের অহংকারে বড়বোন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছেন। এরপর থেকেই তারা একে অপরের শত্রু। এখন ছোট দুই বোনের স্বামীরাও মাতব্বর হতে চান। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে একই আসনে মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সহোদর তিন বোন।
ইসলামপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন তারা। বাছাই পর্বে তিন জনের প্রার্থীতাই বৈধ ঘোষিত হয়েছে।
২৩ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই তারা তিন বোনই নিজ নিজ সমর্থক কর্মীদের নিয়ে এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সহোদর তিন বোনের মধ্যে বড় বোন রাশিদা বেগম চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডিগ্রিরচর ফারাজীপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বর ষাটোর্ধ মোকছেদ আলী সেকের স্ত্রী। মোকছেদ আলী সেক দীর্ঘদিন ধরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে এলাকায় বিচার-শালিশ করেন এবং দরিদ্র মানুষের সেবায় ব্যস্ত সময় পার করেন।
রাশিদা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তিনি গরীব-দুঃখী মানুষকে সব সময়ই সহযোগিতা করেন। বড় বোনের বড় মান। আসন্ন নির্বাচনে তার এলাকার ভোটাররা তিন বোনের মধ্যে তিনি বড় বলে তাকেই অধিক সম্মান করে ভোট দিবেন। তাই তিনি এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
মেঝবোন রুশনাই বেগম একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ডিগ্রিরচর টুংরাপাড়া গ্রামের জোতদার আলীর স্ত্রী। জোতদার আলী বড় গোষ্ঠির মানুষ। তিনি আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তার এলাকার প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন।
রোশনাই বেগম বাংলানিউজকে জানান, তিনি আওয়ামী লীগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা তাকেই ভোট দিবেন। তাই তিনি এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
ছোটবোন হনুফা বেগম ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডিগ্রিরচর মাদ্রাসাপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী।
আবুল কাশেম বলেন, তারা বহুগোষ্ঠির সমাজে বসবাস করেন। তাদের এলাকায় ভোটাররা অত্যন্ত সংগঠিত। তারা নিজ এলাকার প্রার্থীকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভোট দেন না।
হনুফা বেগম বাংলানিউজকে জানান, বড় দুই বোনের কেউই নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে তাকে জিজ্ঞেস না করায় ক্ষোভে দুঃখে প্রার্থী হয়েছেন। এখন আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নাই। তাই নির্বাচনে জয় লাভের জন্য তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
এটিআর/এসএইচ