ফুটবলের রাজা পেলে বিদায় বলেছেন পৃথিবীকে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার ইতি ঘটেছে কিংবদন্তি এই ফুটবলারের মৃত্যুতে।
অভিষেকেই গোল...
পেলের পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু হয় ১৯৫৬ সালে সান্তোসের হয়ে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি খেলতে নেমেছিলেন করিন্তিয়াসের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ৭-১ গোলে জয় পায় তার দল। গোল পেয়েছিলেন পেলে নসিমেন্তেও। শুরু হয়েছিল সান্তোসের সঙ্গে তার ১৮ বছরের পথচলা।
এর পরের বছরই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় পেলের। তখনও তিনি সান্তোসের জার্সিতে প্রতিষ্ঠিত কোনো নাম নন। তবুও সেলেসাও কোচ সালভিও পিরিল্লোর নজর কাড়েন সাউ পাউলোর নতুন স্টেডিয়ামে এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। পরে মারাকানায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অভিষেক হয় পেলের। দলের ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচে গোল পান তিনিও।
এক মহাতারকার জন্ম
পৃথিবীর কাছে পেলে নিজেকে চেনান ১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপে এসে। গ্রুপ পর্বে কেবল একটি ম্যাচেই মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু পরে কোয়ার্টার ফাইনালে সুযোগ পেয়ে ওলেসের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় এনে দেন, বল জালে জড়ান নিজেই।
সেমিফাইনালে পেলে হয়ে উঠেন আরও অপ্রতিরোধ্য। এবার ফ্রান্সের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় সেলেসাওরা। জোড়া গোল আসে পেলের পা থেকে।
মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন
ক্যারিয়ারে কখনোই কোপা আমেরিকা জিততে পারেননি পেলে। ১৯৫৯ সালে একমাত্র কোপায় অংশ নেন তিনি। সেবার আর্জেন্টিনা হেরে যায় ব্রাজিলের কাছে। যদিও সান্তোসের হয়ে বেশ কয়েকটি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব জিতেছেন তিনি।
১৯৬২ সালে পেনারোলের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় ছিল কোপা লিভার্তোদোরেস। এস্তাদিও মনোমেন্তালের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে জোড়া গোল করেন পেলে, সান্তোস জেতে প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান শিরোপা। পরের বছরও বোকা জুনিয়রসের বিপক্ষে একই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গোল করেন তিনি।
এই দুই জয় তাদের আন্তমহাদেশীয় কাপে খেলার সুযোগ করে দেয় ইউরোপের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। প্রথম বছর বেনফিকার বিপক্ষে দুই লেগে পাঁচ গোল করেন পেলে। এরপর হারায় এসি মিলানকেও।
টানা পাঁচ
১৯৬০ এর দশকের পুরোটা জুড়ে পেলে সান্তোসকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। তার ডাকনামও তখন দেওয়া হয়েছিল ‘ওএস সান্তাস্তিকোস’। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল অবধি টানা পাঁচ মৌসুম লিগ জিতেছিল তারা। এর মধ্যে তিনটিতেই সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন পেলে।
যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন?
পেলে ততদিনে তারকা খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে গেছেন। সান্তোস খেলছে পুরো পৃথিবী ঘুরে। এমনই এক সময় তারা যায় নাইজেরিয়াতে। দেশটিতে তখন যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণা করা বিফরার বিরুদ্ধে। বলা হয়ে থাকে, পেলে ও তার সতীর্থরা যখন দেশটিতে পৌঁছায়, তখন ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধ বিরতি ছিল খেলা দেখতে। নাইজেরিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি হয়েছিল ২-২ গোলে ড্র, জোড়া গোল করেছিলেন পেলে।
৬০ বছর পরও অবশ্য এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ দূর হয়নি। অনেকে বলে থাকেন, আগেই লড়াই বন্ধ করেছিল একপক্ষ। কেউ আবার বলেন স্টেডিয়াম থেকে সামান্য দূরেও নাকি শোনা গেছে গুলির শব্দ। পেলে নিজেও এ বিষয়ে খুব বেশি বলতে পারেননি। বছরে ১০০ এর বেশি ম্যাচ খেলার পর তার জন্য যেটা স্বাভাবিকও।
এক হাজার গোল!
পেলে আসলে ক্যারিয়ারে কত গোল করেছেন? বিষয়টি এখনও বেশ বিতর্কিতই রয়ে গেছে। ১৯ নভেম্বর ১৯৬২ সালে অবশ্য তাকে এক হাজার গোলের জন্য অভিবাদন জানিয়েছিল সান্তোস। তখনও তার ৩০ বছরও হয়নি। ক্যারিয়ারের শেষ অবধি কত গোল করেছেন? পেলে নিজে ২০১৫ সালে দাবি করেছেন সংখ্যাটা ১২৮৩।
বিশ্বকাপের অমরত্ব
পেলের জন্য ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ছিল খুবই নাটকীয়। ১৯৬২ সালে ইনজুরিতে কলঙ্কিত হয়েছিল তার বিশ্বকাপ। ১৯৬৬ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে সেলেসাওরা। তখন পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর বিশ্বকাপ না খেলার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় নিন্দিত হন তিনি।
বিশ্বকাপের বছরখানেক আগে এসে বদলে ফেলেন নিজের মন। মেক্সিকো বিশ্বকাপে দলকে তুলেন তিনি। এটা ছিল ফুটবলের লেগেসি ঠিক করা পারফরম্যান্সের আসর। ববি মোরের সঙ্গে তার লড়াই, প্রায় মাঝমাঠ থেকে চোকোস্লোভিয়ার বিপক্ষে গোল, উরুগুয়ের গোলরক্ষকের সঙ্গে রীতিমতো ছেলেখেলা করা সবকিছুইকেই অবশ্য ছাড়িয়ে গিয়েছিল ফাইনাল।
ইতালির বিপক্ষে ফাইনালে তার হেডে করা গোল অমর হয়ে আছে ফুটবল ইতিহাসেই। ম্যাচটিতে ৪-১ ব্যবধানের বিখ্যাত জয় পায় ব্রাজিল। তৃতীয় বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেন পেলে। যে কীর্তিতে তিনিই প্রথম ও শেষ।
গোল ডট কম থেকে অনূদিত
বাংলাদেশ সময় : ১৬০৫ ঘণ্টা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২
এমএইচবি