বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ হিসেবে হাভিয়ের কাবরেরা বর্তমানে তার চতুর্থ বছর পার করছেন। ২০২৫ সালে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে তিনি এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেন, ব্যবহার করেন টানা তিন ম্যাচে তিন ভিন্ন গোলকিপিং কোচ।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন গোলকিপিং কোচ হিসেবে নুরুজ্জামান নয়নকে ধরা হয়। যিনি মালয়েশিয়ার এফএ পরিচালিত এএফসি গোলকিপিং ‘এ’ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২৫ মার্চ ২০২৫ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে গোলকিপিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১০ জুন ২০২৫ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে গোলকিপারদের দায়িত্বে ছিলেন স্পেনের মিগেল আনহেল ইগলেসিয়াস আনিদো। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর ২০২৫ হংকং, চীনের বিপক্ষে ম্যাচে গোলকিপিং কোচ ছিলেন জাভি ফেরান্দো। ৪৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কোচ পূর্বে বার্সেলোনার যুব দলে কাজ করেছেন।
এখানে সমস্যা কোনো কোচের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বা সামর্থ্য নিয়ে নয়। মূল সমস্যা হলো ধারাবাহিকতার অভাব এবং এর ফলে বাংলাদেশের গোলকিপারদের পারফরমেন্সে প্রভাব। যেহেতু প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে জাতীয় দলের ক্যাম্প খুবই স্বল্প সময়ের জন্য হয়, তাই গোলকিপারদেরকে বারবার ভিন্ন ভিন্ন কোচের কৌশল শিখতে হয়েছে। এই অল্প সময়ে ক্রমাগত পরিবর্তন তাদের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
মাঠের ফলাফলেও সেটি স্পষ্ট। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কোনও গোল হজম করেনি। কিন্তু সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দু’টি গোলই এসেছে গোলকিপারের ভুলে, যেখানে মিতুল মারমা সঠিক সময়ে বল গ্রিপ করতে ব্যর্থ হন। হংকং, চীনের বিপক্ষে পারফরম্যান্স আরও খারাপ হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ গোল তিনটিতেই মিতুলের প্রতিক্রিয়া দেরিতে এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি যদি প্রোঅ্যাকটিভ হতেন তবে প্রতিপক্ষকে গোল করতে বাধা দেওয়ার একটা সম্ভবনা ছিল। অথচ ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে নিয়মিত চমৎকার ফর্মে থাকা মিতুল হঠাৎ করেই গত দুই ম্যাচে ছন্দ হারিয়েছেন।
ফুটবলে কোচিং সাফল্যের অন্যতম মূলনীতি হলো ধারাবাহিকতা। ধারাবাহিকতা থাকলে খেলোয়াড়রা কৌশলগত চাহিদা বুঝে মাঠে তা প্রয়োগ করতে পারে। বিপরীতে, বারবার কোচ পরিবর্তনের ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং খেলোয়াড়রা মাঠে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দিতে ব্যর্থ হয়। দুর্ভাগ্যবশত, কাবরেরার অধীনে গোলকিপিং কোচের পদটি একটি ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’-এ পরিণত হয়েছে, যা প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে পরিবর্তিত হচ্ছে।
চলতি অক্টোবরের দল নির্বাচনের সময় কাবরেরা আক্রমণভাগ এবং ডিফেন্ডারদের পাশাপাশি তিনজন গোলরক্ষককে ক্যাম্পে ডাকেন। কিন্তু আক্রমণভাগে ইব্রাহিম এবং সুমন রেজা ইনজুরড থাকার পর, তিনি একজন অতিরিক্ত ডিফেন্ডার (শান্ত) এবং আরেকজন গোলরক্ষক (পাপ্পু) কে ক্যাম্পে জন্য ডাকেন। কিন্তু শেষমেশ চূড়ান্ত ২৩ সদস্যের দলে শান্ত এবং পাপ্পু বাদ পড়েন। হাস্যকরভাবে, হাফ ইনজুরড তপুকে ব্যাকআপ ডিফেন্ডার বিবেচনা করে দলে কোনও ডিফেন্ডারই রাখেননি কাবরেরা। সঙ্গে ৪ গোলকিপার দিয়ে প্র্যাকটিস করার কোনও যৌক্তিকতাও দেখা যায়নি। ফলাফল ম্যাচে ৪ গোল হজম করতে হয়েছে এবং বাংলাদেশ ৩ গোল দিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি, যেখানে গোল দেওয়াটাই বাংলাদেশের ছিল সোনার হরিণ।
শেষ তিনটি বাছাইপর্বের ম্যাচেই গোলকিপিং কোচ পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। নভেম্বর ২০২৫-এর ফিফা উইন্ডো খুবই কাছাকাছি। আশা করা যায় এবার অন্তত ধারাবাহিকতা দেখা যাবে। তবে হাভিয়ের কাবরেরার অদ্ভুত সিদ্ধান্তগুলির কারণে এখন আর কোনো কিছুতেই বিস্ময়ের কিছু নেই।
এমএইচএম