ফেনী: দুপুর গড়িয়ে বিকেলেও ফেনীতে দেখা মিলছে না সূর্যের। কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা।
শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর চিত্র ধারণ ক্ষমতারও ৫-৬ গুণ বেশি। এর মধ্যে সপ্তাহ জুড়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের অধিকাংশই শিশু রোগী। বহিঃবিভাগে প্রতিদিন ১২শ থেকে ১৫শ জন চিকিৎসা নেওয়াদের মধ্যেও শীত ও ভাইরাস জনিত রোগী বেশি। গত কয়েক দিনে ভাইরাস ও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ১৭ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৫ জন। যার মধ্যে প্রায় ৪৫ জনই শিশু। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।
শয্যা না পেয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝে ও বাইরে থাকা টুলে বসে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় অনেককে। একই চিত্র ছিল শিশু ওয়ার্ডেও। সেখানে ২৬ শয্যার বিপরীতে এ মোট ভর্তি রোগী রয়েছে ৪৫ জন। তাদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান কর্তব্যরত সেবিকা।
চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর স্বজনরা বলছেন ঠাণ্ডা ও ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলে চিকিৎসক ভর্তি দিচ্ছেন। ওয়ার্ডে যাওয়ার পর রোগীর জন্য বেড পাওয়া তো দূরে থাক, মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নেওয়ার জন্যও জায়গা খালি পাওয়া দুষ্কর।
ছাগলাইয়ার পাঠাননগর থেকে আসা আবদুল করিম নামে এক শিশু রোগীর বাবা বলেন, গত ২ দিন ধরে মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থাকায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার ভর্তি দিয়েছেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে থাকা বেঞ্চে বসিয়ে মেয়েকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী জানান, শতশত মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম হওয়ায় প্রায়ই সব রোগী শেষ না করেই কক্ষ ত্যাগ করেন চিকিৎসকরা। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস ও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময়। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ভর্তি থাকায় রোগীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন সে তা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের।
শীতে ঠাণ্ডা ও ভাইরাস জনিত রোগ থেকে শিশুর সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. নুরুল আবসার মামুন।
তিনি জানান, ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতকালে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই অভিভাবকদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে। ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচতে শীতে শিশুকে আরামদায়ক ও গরম কাপড় পরাতে হবে।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের এক লেয়ার বেশি কাপড় নিশ্চিত করুন। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ব্যবহৃত জামা-কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। শীতের সময় বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। ধুলাবালি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে ফুসফুসে ঢুকে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া এবং ধুলাবালি শিশুদের নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ভালোভাবে হাত না ধুলে এর মাধ্যমে অনেক রোগব্যাধি ছড়ায়। সেজন্য শিশুর খাওয়ার আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। শীতের সময় ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে ভালোভাবে হাত না ধুলে সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকে যায়। এসময় ঘরে পানি ফুটিয়ে পান করলে পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এতে করে শিশুর পানিশূন্যতা যেমন পূরণ হবে, সেই সঙ্গে গরম পানি তাকে ঠাণ্ডা লাগা থেকে সুরক্ষা দেবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের বাইরের খোলা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরে খাবার ঢেকে রাখতে হবে। যথাসম্ভব গরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। শীতকালে ছোঁয়াচে বা চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এসময় তাকে খালি পায়ে মেঝেতে হাঁটাহাঁটি কিংবা খেলাধুলা করতে দেওয়া যাবে না। নবজাতকের অভিভাবকদের অধিক যত্নবান হতে হবে। এছাড়া শিশু অসুস্থ হলে জরুরি ভিত্তিতে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
এসএইচডি/এমএমজেড