দেশে প্রথমবারের মতো রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে জাতীয়ভাবে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে এই কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে একটি ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
টিকা গ্রহণের জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের পর জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) সুত্রে জানা যায়, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন দেশের স্কুল ও মাদরাসাগুলোতে ক্যাম্প করে এবং পরবর্তী ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে এই টিকা দেওয়া হবে।
এক ডোজের ইনজেকটেবল এই টাইফয়েড টিকা তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের এই পুরো প্রক্রিয়াতে সহযোগিতা করছেন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) ও ইউনিসেফ।
টাইফয়েড জ্বরের (Typhoid Fever) বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের চিত্র
২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকেন। এর অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করেন দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় ।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (GBD) ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৮ জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় অর্থাৎ প্রতি ১ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৯০ জন রোগী টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ছিল, যার মধ্যে ৬১ শতাংশ ছিল ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
বাংলাদেশে টাইফয়েডে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম।
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের টার্গেট ও ভ্যাকসিন
টার্গেট: ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশু
মোট টার্গেট: ৪ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০৪ জন শিশু
টিকার নাম: টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)
প্রতি ভায়ালে ডোজের সংখ্যা: ৫ ডোজ
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান: বায়োলজিক্যাল ই লিমিটেড, ভারত
এই টিসিভি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা কর্তৃক সুপারিশকৃত, নিরাপদ ও কার্যকরী
প্রতি শিশুর জন্য: ১ ডোজ (0.5 ml)
প্রয়োগ পথ: মাংশপেশীতে
টাইফয়েড ক্যাম্পেইনে টিকা প্রদান কার্যক্রমের সময়কাল
১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর
প্রথম দুই সপ্তাহ (১২-৩০ অক্টোবর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ক্যাম্পেইন (যে কোন ১০ কর্মদিবস) এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহ (১-১৩ নভেম্বর) কমিউনিটিতে (গ্রামাঞ্চল ও নগরাঞ্চলে নিয়মিত এবং স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ক্যাম্পেইন) (যে কোনো ৮ কর্মদিবস)।
এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের লক্ষ্য থাকবে শতভাগ শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করবো। মানুষের মধ্যে যাতে ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমাদের মানুষকে বুঝাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সবচেয়ে সফল কর্মসূচি হলো টিকাদান কর্মসূচি। টাইফয়েডের টিকাও হয়ত রেগুলার টিকাদান কর্মসূচিতে ঢুকবে।
আরকেআর/আরবি