ঢাকা: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটিং ধসের নাটকীয়তায় সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ। মাত্র ৭৯ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী।
আর এই হারের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০তে পিছিয়ে সিরিজ খোয়াল মাশরাফিরা। কিউইদের করা ২৫১ রানের জবাবে ৪২.৪ ওভারে ১৮৪ রানে সবক’টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন হয় দলীয় ৩০ রানে। তামিম ইকবাল আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান ৭৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। কিন্তু একটি ভুল পিছিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। দুই ব্যাটসম্যান একই উইকেটের দিকে দৌড়ালে রান আউটের শিকার হন সাব্বির।
নেলসনে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে অষ্টম ওভারে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায়। টিম সাউদির বলে টম ল্যাথামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ২৩ বলে তিনটি চারে ১৬ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
১৩তম ওভারে দলীয় অর্ধশতক আসে বাংলাদেশের। আর দলীয় শতক আসে ২২তম ওভারে। তবে একই ওভারের শেষ বলে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউটের শিকার হন সাব্বির রহমান। ৪৯ বলে দুটি চার ও তিন ছক্কায় ৩৮ রান আসে হার্ডহিটার এ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এদিন লাকি ফার্গুসনের বলে ব্যক্তিগত ১ রানে বোল্ড হন অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান। ২৯তম ওভারে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। কেন উইলিয়ামসনের বলে ৭ রানে নেইল ব্রুমকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি।
আগের ম্যাচে অর্ধশতক করা মোসাদ্দেক উইলিয়ামসনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৩ রানে। তবে ৩২তম ওভারে ইমরুল কায়েস ৫৯ রানে ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ৮৯ বলে ছয়টি চারে নিজের ইনিংস সাজানোর পর টিম সাউদির বলে আউট হন এ ওপেনার।
অভিষেকটা ভালো হলো না তানভির হায়দারের। বোলিংয়ে উইকেট শূন্য থাকার পর উইলিয়ামসনের তৃতীয় শিকার হন তিনি। করেন মাত্র দুই রান। ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফেরেন বাংলাদেশ দলনেতা মাশরাফি বিন মর্তুজা। ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হন তিনি।
মিচেল স্যান্টনারের বলে শূন্য রানে ফেরেন তাসিকন আহমেদ। স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নুরুল হাসান বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হন। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।
এর আগে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যান নেইল ব্রুমের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সবক’টি উইকেটের বিনিময়ে ২৫১ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য সফরকারী বাংলাদেশের প্রয়োজন হয় ২৫২ রান।
কিউদের হয়ে ব্যাট হাতে নেইল ব্রুম খেলেছেন অপরাজিত ১০৯ রানের ইনিংস।
আর টাইগারদের হয়ে বল হাতে মাশরাফি ৩টি, সাকিব ও তাসকিন ২টি করে এবং শুভাশীষ রায় ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। দলের বাকি উইকেটটি এসেছে রান আউট থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সাক্সটন ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে বল হাতে প্রথম ওভারেই সফলতা পান সফরকারী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওভারের চতুর্থ বলটি কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলের পায়ে লাগিয়ে এলবি’র আবেদন তুলতেই আঙ্গুল উঁচিয়ে সায় দেন আম্পায়ার। ফলে দলকে কোন সংগ্রহ না এনে দিয়েই উইকেট ছাড়া হন ওপেনার মার্টিন গাপটিল।
গাপটিলের ফিরে যাবার পরে বেশ সন্তর্পণে ব্যাট চালান কেন উইলিয়ামসন ও টম লাথাম। আর তাদের ব্যাটেই বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হঠাৎই তাদের সেই স্বপ্ন যাত্রায় বাধ সাধেন তাসকিন।
১১তম ওভারে তার পঞ্চম বলটি কেন উইলিয়ামসন সোজা ব্যাটে খেলতে গেলে ব্যক্তিগত ১৫ রানে মিডঅনে ধরা পড়েন সাকিবের হাতে। ব্ল্যাক ক্যাপসরা তখনও ৩৭ রানের কোঠা পার হতে পারেনি। উইলিয়ামসনের বিদায়ের পর ১০ রান যোগ করে সাকিবের বলে এলবি’র ফাঁদে পড়েন ওপেনার টম লাথাম।
২০ ওভারেই ৭৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড যখন ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই টাইগার শিবিরকে দারুণ এক ব্রেক থ্রু এনে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ২৩তম ওভারে তার পঞ্চম ডেলিভারিটি জেমস নিশাম ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে চাইলে ব্যক্তিগত ২৮ রানে তাকে স্ট্যাম্পড করে ক্রিজ ছাড়া করেন নুরুল হাসান সোহান। স্বাগতিকদের দলীয় সংগ্রহ তখন ৯৮ রান।
নিশামের ফেরার পরে ২৬তম ওভারে আর ৯ রান যোগ করে অর্থাৎ দলীয় ১০৭ ও ব্যক্তিগত ৩ রানে মাশরাফির দারুণ এক ইন সুইংয়ে পরাস্ত হন কলিন মুনরো। ফলে ১০৭ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
দলীয় ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে যাওয়া স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুই ব্যাটসম্যান নেইল ব্রুম ও লুক রনকির ব্যাটে বেশ ভালই প্রতিরোধ গড়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতিরোধের পথে আবার বাধ সাধেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
৩৭তম ওভারে তাসকিনের তৃতীয় বলে তানভীর হায়দারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে লুক রনকি ব্যক্তিগত ৩৫ রানে প্যাভিলনে ফিরলে স্বাগতিকদের রানের চাকা মন্থর হয়ে পড়ে। সেই মন্থর চাকাকে আরও গতিশীল করে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের লক্ষ্যে সপ্তম উইকেটে ভালই খেলছিলেন নেইল ব্রুম ও মিচেল স্যান্টনার।
তবে ব্রুমকে খুব বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি স্যান্টনার কেননা, দলীয় ১৯৮ রানে শুভাশীষের বলে ব্যক্তিগত ৯ রানে তিনি ক্যাচ তুলে দেন মাশরাফির হাতে।
এরপর টিম সাউদিকে ব্যক্তিগত ৩ রানে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন সাকিব। আর লকি ফার্গুসনকে ব্যক্তিগত ৪ রানে নিজের তৃতীয় শিকার পরিণত করেন মাশরাফি।
কিউদের শেষ ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্ট ব্যক্তিগত ১২ রানে হয়েছেন রান আউট।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস