চট্টগ্রাম: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা জাতির মধ্যে কোনো বিভক্তি চাই না—ধর্ম, ভাষা বা জাতিগত কারণে নয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাই।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া জিরি মাদরাসা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং আল্লামা শাহ মোহাম্মদ তৈয়বের কবর জিয়ারত করেন।
বাংলাদেশের নাগরিকরা সাংবিধানিকভাবে সমান অধিকার ভোগ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আমি অনেক রাজনৈতিক দলের কর্মীর সঙ্গে মেলামেশা করি, সেহেতু বিভিন্ন প্রশ্ন প্রায়ই আমার কাছে আসে। বাংলাদেশে আমরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ মুসলমান, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। বাকি ৮ থেকে ১০ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের নাগরিক। ইসলামের শিক্ষা হলো—সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার রক্ষা করা। সম্প্রীতির সঙ্গে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে বসবাস করতে হবে। এই বন্ধন অটুট রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের নামের সঙ্গে যদি ‘ইসলাম’ শব্দটা থাকে, তাহলে কি তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায়? আমরা যেন রাজনৈতিক কারণে ইসলামের ব্যবহার বন্ধ করি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, দুনিয়াবী স্বার্থে বা শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্মের ক্ষতি করা ঠিক নয়। কোনো রাজনৈতিক কারণ বা ক্ষমতা লাভের জন্য আমরা যেন দ্বীনকে ব্যবহার না করি, যেন বিভাজনের রাজনীতি না হয়। কেউ কেউ আজকাল বলতে শোনা যায়—অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে! নাউজুবিল্লাহ! কোনো দলের নামে যদি ‘ইসলাম’ শব্দ থাকে, সেটি একটি রাজনৈতিক দলের নাম হতে পারে, কিন্তু সেটিই ইসলাম নয়।
ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির ইতিহাসে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী, সেটা নিঃসন্দেহে অপপ্রচার। ইসলামবিদ্বেষী শক্তির পতন ঘটেছে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার যার কর্ম অনুযায়ী পতন ঘটান। আমরা আগেই অনুমান করেছিলাম—ইসলামবিদ্বেষী ও আলেমবিদ্বেষী এই আওয়ামী লীগ কখনো বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, ক্ষমতাও ধরে রাখতে পারবে না। সে সময় আমাদের বহু আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন, বিশেষ করে শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম-ওলামা শাহাদাত বরণ করেছেন।
রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে না হয়, যেন রাজপথে শাপলা চত্বরের মতো হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে—এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কেউ আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন। এই বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে আমরা দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখা করছি। কেউ কেউ বলে—‘নির্বাচন আসছে, তাই টুপি পরে আলেমদের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমরা আলেম-ওলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যেখানে সকল মানুষ একত্রে আলোচনা করে নীতি ও আইন নির্ধারণ করবে। এতে করে আইন সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এবং তা বাস্তবায়ন করাও সহজ হবে।
এ সময় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ইদ্রিম মিয়াসহ জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমআই/পিডি/টিসি