ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতার সঙ্গে দেখা করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
মমতার সঙ্গে দেখা করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল

কলকাতা: ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মোদিবিরোধী মহাজোটের ভিত মজবুত করার অঙ্কে এতদিন মমতার সঙ্গে শোনা যাচ্ছিল অখিলেশ যাদব, নীতীশ কুমার, স্ট্যালিনদের নাম। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন অন্তরালেই।

 

কর্ণাটকে বিজেপির ভরাডুবি এবং কংগ্রেসের ফের ক্ষমতা দখলের পরই ভারতে দ্রুত বদলাচ্ছে রাজনীতির সমীকরণ। আর এখন অন্তরাল থেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন কেজরিওয়াল।

মঙ্গলবার (২৩ মে) পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেখা করলেন। সঙ্গে ছিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, দিল্লির মন্ত্রী অতিশী ও আপ সাংসদ সদস্য রাঘব চাড্ডা।

মমতা বলছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একত্রিত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব। আমাদের কিছু চাই না। একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। যা পারেন করে নিন। রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীরা একত্রিত হচ্ছে। আর বিরোধীরা একত্রিত হলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন নিশ্চিত।  

একইসঙ্গে মমতা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, যেভাবে বিরোধীরা একত্রিত হচ্ছে, তাতে চমকপ্রদ কিছু হলে ২০২৪ লোকসভার আগেও পড়ে যেতে পারে কেন্দ্রের সরকার।  

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, আর তো ৬ মাসের ব্যাপার। আর যদি কোনো মিরাকল হয়ে যায়, সরকার আগেও পড়তে পারে। কে বলতে পারে, আমি আজ বেঁচে আছি, কাল নাও থাকতে পারি। নির্বাচন হলেও ৬ মাস বাকি। তার চেয়ে বেশি নয়।

একইভাবে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এই অহংকারী সরকারকে উচ্ছেদ করা উচিত, পতন আসন্ন বলে মন্তব্য করেছেন।

মূলত কেজরিওয়ালের এই সক্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা এক অর্ডিন্যান্স। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেরও পরও কেন্দ্র দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি এবং পোস্টিং নিয়ে নতুন অর্ডিন্যান্স জারি করেছে।  

অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই নয়া কমিটি তৈরি করে ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখেছে কেন্দ্র সরকার। এ কারণে ক্ষুব্ধ দিল্লির শাসকদল আপ।

গত রোববার (২১ মে) এই মর্মে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছে বিহার রাজ্য। দিল্লিতে গিয়ে আপ প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব।  

মঙ্গলবার মমতার দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল। এদিন বিকেলেই কেজরিওয়াল কলকাতা থেকে যাচ্ছেন মুম্বাইয়ে। সেখানে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। পরে এই অর্ডিন্যান্স বিষয়ে উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, তেলেঙ্গানা রাজ্যের চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গেও দেখা করবেন।  

অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত বিল যাতে রাজ্যসভায় কোনোভাবেই পাস না হয়, সেজন্য প্রত্যেক বিরোধী দলের সমর্থন চাইছেন কেজরিওয়াল। তার কথায়, সবাই একজোট হয়ে এই বিলের বিরোধিতা করলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সেমি ফাইনাল হয়ে যাবে। দেশব্যাপী বার্তা যাবে-২০২৪ এ বিজেপি সরকার হটে যাচ্ছে।

নির্বাচনকে মাথায় রেখে গেল ১৭ মার্চ কালীঘাটের বাসভবনে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। তার ঠিক সাতদিনের মাথায় কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী দেখা করেন মমতার সঙ্গে। গত ২৪ এপ্রিল রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব একপ্রস্থ বৈঠক করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। আর মঙ্গলবার বৈঠক সারলেন কেজরিওয়াল।

লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো এখন থেকেই যদি জোটবদ্ধ না হয়, তাহলে নির্দিষ্ট ‘গন্তব্যে’ পৌঁছানো যাবে না। এ বিষয়ে নিশ্চিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাহুল গান্ধী- প্রত্যেকেই। সেই লক্ষ্যে বিরোধীদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তারপরও অবশ্য কেজরিওয়াল এই জোটের দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছিলেন না।  

তবে অর্ডিন্যান্সের মধ্যদিয়ে দিল্লির লেজে পা পড়তেই মোদি বিরোধী ফর্মুলার বাইরে থাকতে চাইছে না আম আদমি। আর মমতা-কেজরি শক্তি এক হলে অনেকটাই চিন্তায় থাকতে হবে মোদির দল বিজিপিকেও।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, ২৩ মে, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।