ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

এক নজরে লোকসভা নির্বাচনের চার হেভিওয়েট প্রার্থী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪
এক নজরে লোকসভা নির্বাচনের চার হেভিওয়েট প্রার্থী

কলকাতা: রাহুল গান্ধী না নরেন্দ্র মোদি, কে বসছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে? এই অপেক্ষার অবসান হবে আগামী ১৬ মে।

২০১৩ সালের জনশুমারি অনুযায়ী প্রায় একশ’ ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের জন্য মূল লড়াই হবে দুই রাজনৈতিক নেতা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (আইএনসি) রাহুল গান্ধীর মধ্যে।



এই দুই নেতার মধ্যে মোদির রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব রয়েছে লালকৃষ্ণ আদভানির এবং রাহুলের জীবনাচার মা সোনিয়া গান্ধীতে প্রভাবিত।

১৯৭১ সালে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে (আরএসএস) যোগদান করেন। জয়প্রকাশ নারাওয়নের নেতৃত্বে জরুরি অবস্থার সময় তিনি ইন্দিরা গান্ধীবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের বারানসি এবং গুজরাটের ভদোধরা আসন থেকে ইতোমধ্যে নিজের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোদি। সেখানে তিনি জানিয়েছেন তার সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ।

মোদির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার কাছে অস্থাবর সম্পত্তি আছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫৮২ রুপির। স্থাবর সম্পত্তির হিসেবে মোদি জানিয়েছেন, গুজরাটের গান্ধীনগরে তার নিজের বাড়ির মূল্য প্রায় এক কোটি রুপি। এই ঘোষণাপত্রে মোদি জানিয়েছেন, তার গাড়ি বা কোনো জমি নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, গত দুই বছরে তিনি কোনো অলঙ্কার কেনেননি।

মোদির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে, তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ এক কোটি ৫১ লাখ রুপি।

যদিও জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে ছিলেন মোদি। তবুও তার রাজনৈতিক গুরু বলতে বোঝায় লাল কৃষ্ণ আদভানিকেই।

কিন্তু এই আদভানিরই মত ছিল না মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে লড়ুক বিজেপি। খুব স্বাভাবিকভাবেই বলিষ্ঠতম নেতার পাশে ছিলেন রাজনৈতিক শিষ্য সুষমা স্বরাজসহ আরও অনেকে। কিন্তু বিজেপি’র সভাপতি রাজনাথ সিংহ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভগবৎ বুঝিয়ে রাজি করেন আদভানিকে। অবশেষে গুরুর কাছে হাজির হন শিষ্য। শেষ পর্যন্ত শিষ্যের মাথায় আশীর্বাদের হাত রাখেন আদভানি।

আদভানি নিজেও লড়াই করছেন নির্বাচনে। এবার লক্ষ্য করা যাক নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানির কমিশনকে জানানো সম্পত্তির পরিমাণ।

গান্ধীনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লাল কৃষ্ণ আদভানি তার প্রার্থী পদ জমা দিয়েছেন। আদভানি জানিয়েছেন, তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ সাত কোটি রুপির কিছু বেশি।

গত ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আদভানি জানিয়েছিলেন, তার মোট সম্পত্তির পরমাণ প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ রুপি। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার এবং তার স্ত্রীর যুগ্মভাবে ৪০ লাখ রুপি মূল্যের গহনা আছে।

নরেন্দ্র মোদির মতো আদভানিরও কোনো গাড়ি নেই। ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলার কথা নিজের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন আদভানি।

এবার আসা যাক কংগ্রেসের অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গে।

আমেঠি লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়াই করছেন রাহুল গান্ধী। বলা যায়, তরুণ ভারতের যে চিত্র কংগ্রেসের বলিষ্ঠ নেতারা তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন, তার প্রধান সেনাপতি রাহুল গান্ধী। তবে রাহুল একা নন, তার সঙ্গে আছে একটি তরুণ ব্রিগেড। ভারতের রাজনীতিতে যাদের ‘টিম রাহুল’ বলে অভিহিত করা হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এদেরই ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

রাহুল গান্ধীর লড়াইস্থল আমেঠি লোকসভা কেন্দ্রের একটি ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট আছে। ১৯৮০ সালে এই নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছেন রাহুল গান্ধীর চাচা ইন্দিরা গান্ধীর প্রথম পুত্র সঞ্জয় গান্ধী। এই বছরেই প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যান সঞ্জয় গান্ধী।

সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মেনকা গান্ধী এবং পুত্র বরুণ গান্ধী বর্তমানে বিজেপি’র প্রথম সারির নেতা-নেত্রী। শোনা যায়, সঞ্জয় গান্ধী বেঁচে থাকতেই মেনকা গান্ধীর পারিবারিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল গান্ধী–নেহেরু পরিবারের সঙ্গে। আবার শোনা যায়, ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার সময় সঞ্জয় গান্ধীর বিভিন্ন পদক্ষেপকে সক্রিয় বলে বর্ণনা করেছিলেন পরবর্তী সময়ের কিছু কংগ্রেস নেতা। তার ফলেও দূরত্ব তৈরি হয় কংগ্রেসের সঙ্গে। এক সময় মেনকা গান্ধী নিজের রাজনৈতিক দলও তৈরি করেছিলেন।

তবে এখন রাহুল এবং বরুণ রাজনীতিতে দুই মেরুর বাসিন্দা হলেও তারা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই কখনো বরুণের কবিতার প্রশংসা করেন রাহুল। আবার দিদি প্রিয়াংকার প্রতি বেরিয়ে আসে বরুণের ভালবাসাও।

১৯৮০ সালের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমেঠি কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাজীব গান্ধী। ১৯৯৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয় লাভ করেন সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ থেকে প্রতিটি নির্বাচনে রাহুল গান্ধী এই আসনে জয়লাভ করেন।

২০১৪ সালে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই আসনে লড়াই করছেন বিজেপি’র স্মৃতি ইরানি, আম আদমি পার্টি’র কুমার বিশ্বাস, এবং বিএসপি’র ধ্রমেন্দ্র প্রতাপ সিং।

রাহুল ইতোমধ্যে তার প্রার্থীপদ জমা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন তার সম্পত্তির কথা। রাহুলের হাতে নগদ আছে ৩৫ হাজার রুপি। ব্যাংক, পোস্ট অফিস ইত্যাদিতে তার আছে তিন লাখ দুই হাজার ৭২১ টাকা। বন্ড, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ আছে ৮৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৫০ রুপি। ছয় কোটি ৮৯ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩ রুপি গৃহ সম্পত্তি কেনার জন্য অগ্রিম দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তার মোট গহনা আছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯১৫ রুপির। এছাড়া, মূল্যবান বিভিন্ন জিনিস আছে এক লাখ ৮১ হাজার ৮০৩ রুপির।

রাহুল গান্ধী একটি ফার্ম হাউজের অর্ধেক অংশের মালিক। যার মূল্য এক কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৪ রুপি। তার মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ রুপি। এর মধ্যে নয় লাখ রুপি তিনি ঋণ করছেন সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে। তার কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।

রাহুলের রাজনৈতিক হাতেখড়ি তার মা সোনিয়া গান্ধীর হাত ধরে। উত্তর প্রদেশের রায় বেরিলি আসন থেকে লড়াই করছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া। এই রায় বেরিলি লোকসভা আসনের সঙ্গে গান্ধী-নেহেরু পরিবারের এক দীর্ঘ দিনের যোগসূত্র।

১৯৫১ সালে প্রথম এই আসনে লড়াই করেন ফিরোজ গান্ধী। ফিরোজ গান্ধী স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর জামাতা তথা ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ফিরোজ গান্ধী এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লোকসভায় নির্বাচিত সদস্য হিসেবে কাজ করে গেছেন।

১৯৬৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম এই লোকসভা আসনে লড়াই করেন। ১৯৯৯ সালে এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন সোনিয়া গান্ধী। ২০১৪ সালেও রায় বেরিলি আসনে লড়াই করছেন সোনিয়া। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপি‘র অজয় আগরওয়াল, বিএসপি প্রার্থী রাম লখন পাসি এবং আম আদমি পার্টি’র ফাকুরুদ্দিন।

মনোনয়ন পেশ করে সোনিয়া গান্ধী তার হলফনামায় জানিয়েছেন, বিগত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে তার মোট আয় হয়েছে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার ২৩ লাখ রুপির গহনা এবং ৩৯ লাখ রুপির সোনা আছে। এছাড়া, তার তিন একরের বেশি কিছু জমি এবং ইটালিতে একটি গৃহ সম্পত্তি আছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার হাতে নগদ ৮৫ লাখ রুপি এবং ব্যাংকে  জমা আছে ৬৬ লাখ রুপি। তার প্রায় এক কোটি রুপি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ আছে।

প্রার্থীরা প্রার্থিতা জমা দিলেন, চলছে নির্বাচন। ভোটের হিসাব নিয়ে চলছে নানা রকমের জল্পনা-কল্পনা।

এখন দেখার বিষয় রাহুল, নাকি মোদি- কে আগামী দিনে ভারতের ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ভোটারের অধিকাংশের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।