ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

চাওয়া-পাওয়া

অমিত বসু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৪
চাওয়া-পাওয়া

কৈশোরে সরকারি দুধের ডিপোয় কাজ করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকালে দু’ঘণ্টা বোতলের দুধ বিতরণ।

বেতন মাসে বিশ টাকা। মা গায়ত্রী দেবীর হাতে টাকাটা তুলে দিতেন সাংসারিক সাহায্যার্থে। রাজনীতির শুরু তখন থেকেই। বাবা কংগ্রেস কর্মী। অভাব অনটনের মধ্যেই অমোঘ রাজনৈতিক টান। ক্রমশ জলজোয়ারে ভাসতে ভাসতে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে। মাটি থেকে আকাশ ছোঁয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। অনেকের পলিটিক্যাল গ্রাফ এরকমই। মমতা সবাইকে চমকে দিয়েছেন অন্য প্রতিভায়। তিনি একের পর এক বই লিখে চলেছেন। গদ্য-পদ্য দুই-ই। এত বেশি লিখছেন প্রকাশক ছেপে কূল পাচ্ছেন না। তৃণমূল কর্মী আর নেতাদের সেই বই পড়ে জ্ঞানার্জনের সুযোগ ঘটছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টল চার্চিলও লিখতেন। তেরো খণ্ডে লেখা তাঁর আত্মজীবনী নোবেল প্রাইজও পেয়েছিল। মমতা নোবেলের হকদার হলে বাঙালির গর্বের সীমা থাকবে না। রবীন্দ্রনাথের পর তিনিই হবেন সাহিত্যে দ্বিতীয় বাঙালি নোবেলজয়ী।

আঁকায় নোবেল হয় না, কিন্তু অনেক টাকা পাওয়া যায়। যশও হয়। মমতা ছবি আঁকেন। তৃণমূলের প্রতীক জোড়া ফুল আঁকা একটি ছবি বিক্রি হয়েছে এক কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায়। ছবিটা কোথায় রাখা আছে কেউ জানে না। ক্রেতা, সারদা চিটফান্ডের মালিক সুদীপ্ত সেন বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি সবাই বোঝেন না। তিনি বুঝেছেন তাই এত দাম দিয়ে কিনেছেন। বাঙালির মতো পরশ্রীকাতর জাত দ্বিতীয়টি নেই। অন্যের কৃতিত্বকে খাটো করার ধারাটা মজ্জাগত। কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী কালনার জনসভায় বলেছেন, একটা জোড়াফুল আঁকা ছবি এক কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় সুদীপ্ত সেন কিনেছিল। ওটা তার বাড়ি থেকে খুলে নিয়ে এলে ১টাকা ৮৬ পয়সাও দাম হবে না। নরেন্দ্র মোদীর ছবির দাম নিয়ে কটাক্ষ করায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ঠিক একজনের কাছে যে ছবি মূল্যহীন, আর একজনের চোখে সেটাই অমূল্য। অধীররঞ্জন বড় নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেই ছবি বুঝবেন সেটা মনে করার কোনও কারণ নেই।
দামটা যদি সত্যি হয় তাহলে মমতা, কিংবদন্তী শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনকেও ছাপিয়ে গেছেন। হুসেন বেঁচে থাকলে মমতার ছবির দাম শুনে চমকে উঠতেন। তাঁর ছবি দেখে তারিফ করতেন কিনা সেটা জানার সুযোগ নেই। মমতার দলে আছেন শিল্পী যোগেন চৌধুরী। তাঁকে দিয়ে পরখ করানো যেত। যোগেন চৌধুরী পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য। দিল্লি-কলকাতার মধ্যে শার্টল কক্ষের মতো ছোটাছুটি করছেন। হাজার ব্যস্ততা থাকলেও মমতার একটা ছবি দেখার সময় হবে না, তাই কখনও হয়! তৃণমূলের সঙ্গে আছেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। কাকের ছবি এঁকে তাঁর খুব নাম ডাক। তিনিও মমতার ছবির বিচারক হতে পারতেন।

মমতার কাজের মতামত দেওয়ার সাহস কারোও নেই। সাহিত্য, পেইন্টিংস, রাজনীতি কোনও কিছুর সমালোচনা তিনি বরদাস্ত করেন না। এক টুকরো বিরূপ মন্তব্য মানে চিরতরে নির্বাসন। ছবি আঁকা নিয়ে মমতার ইমেজ যখন ছাড়খাড় করছে বিরোধীরা তখন অন্তত তৃণমূলী শিল্পীদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে পারতেন, মমতার মতো ছবি আঁকতে কেউ পারবেন না। সাহস থাকে এঁকে দেখান। তাতে বিরোধীদের মুখ বন্ধ না হলেও, মমতার বিরুদ্ধে বিষোগাদ করার আগে দুবার ভাবতেন।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। এবার ভোটে দাঁড়াননি। বিদায়বেলায় তিনি এতটা নির্মম হবেন কল্পনা করেননি মমতা। সারদা কেলেঙ্কারির বিষয়টা এতদিন ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছিল কংগ্রেস। ভোট চলার সময় ঢাকনা খুলে দেওয়া হবে। মমতা আক্রোশে ‘তুই-তুকারি’ করে গালাগাল দিয়েছেন চিদম্বরমকে। তাঁকে ছুলে কী হবে, তা নিয়ে শাসাতেও কসূর করেনি। চিদম্বরম বলেছেন, সারদা তদন্ত সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কথাটা বিশ্বাস করা কঠিন। যারা তদন্ত করছে সেই ‘এনফোর্সকেস্ট ডিরেক্টরেট’ বা ইনি অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাজ করে। অর্থমন্ত্রী হয়ে চিদম্বরম সেটা জানবেন না, তাই কখনও হয়! মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াও যে অশোভন সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

সারদা লোক ঠকিয়ে যে টাকা তুলেছে তাতে তৃণমূলের সহযোগিতা ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এটা যদি সত্যি হয়, ঘটনাটা মারাত্মক। গরিব মানুষের টাকা লুট করছে কোনও রাজনৈতিক দল সেটা ভাবাও কঠিন। কংগ্রেস, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তদন্ত কতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে, পরিষ্কার নয়। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে কাজে লাগবে ভেবে একটু পিছিয়ে যেতে পারে।

নরেন্দ্র মোদী এই চিন্তাটা মাথায় রেখেই শ্রীরামপুরের জনসভায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। বলেছেন, চিদম্বরম সারদা তদন্ত চালাতে পারবেন না। যেটা করার ক্ষমতায় গিয়ে আমিই করব। মোদীর মন্তব্য, ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে যা ক্ষতি করেছে, তার চেয়ে তৃণমূল অনেক বেশি সর্বনাশ করেছে মাত্র তিন বছরে।
মোদীর কথায় স্পষ্ট, মমতা বিজেপির থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। তাই তাঁকে বিধতে বাধা নেই মোদীর। কংগ্রেস ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে কাছে টানতে চাইছে। মমতার সঙ্গে যতই ঝগড়া হোক, একটা সেন্টিমেন্ট তো আছে। তৃণমূলের নামের সঙ্গে যে কংগ্রেস নামটা যুক্ত, সেটা অস্বীকার করবে কে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।