ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

খাসতালুক আমেথিতে চ্যালেঞ্জের মুখে রাহুল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৪
খাসতালুক আমেথিতে চ্যালেঞ্জের মুখে রাহুল রাহুল গান্ধী ও স্মৃতি রানী

ঢাকা: গান্ধী পরিবারের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত আমেথিতে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন কংগ্রেসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী। এর আগে এ আসনের ১৪টি ভোটের আসরে মাত্র একবার পরাজিত হয়েছিলো গান্ধী পরিবার।

আর সব আসরে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে লড়া মানেই যেনো জামায়াত খোয়ানোর ইতিহাস।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রাহুল গান্ধীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নেমেছেন বিজেপি প্রার্থী চলচ্চিত্র তারকা স্মৃতি ইরানি। কম যাচ্ছেন না আম আদমি পার্টির প্রার্থী কুমার বিশ্বাসও।

এরই মধ্যে আসন ঘুরে গেছেন আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দু’এক দিনের মধ্যে নির্বাচনী ড্রাইভে আসছেন বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদীও।

কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীদের এমন তৎপরতা ও হম্বিতম্বিতে মোটেও ঘাবড়াচ্ছেন না গান্ধী পরিবারের ভক্তরা। গত কয়েক দশক ধরে আমেথিকে যারা গান্ধী পরিবারের খাস তালুক বানিয়ে রেখেছেন, আসন্ন নির্বাচনেও জয়ের ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী তারা।

প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা, স্থানীয় কবি ও সাংবাদিক জগদীশ পীযূষের বক্তব্যেও তাই দারুণ আত্মবিশ্বাসের স্ফূরণ।
 
তার সাফ কথা, এবার ওরা হাড়ে হাড়ে টের পাবে, আমেথি কেন গান্ধী পরিবারের খাস তালুক।

১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ‘আমেথি কি ডঙ্কা, বিটি প্রিয়াঙ্কা’ স্লোগান দিয়ে আমেথিতে সে সময়কার প্রার্থী রাজিব গান্ধীর নজর কাড়েন পীযূষ। এরপর ‘রাজিব গান্ধী আয়ে হ্যায়, নই রোশনি লায়ে হ্যায়’, ও ‘লেঙ্গে বদলা দেঙ্গে খুন, ভাইয়া বিনা আমেথি সুন’ ইত্যাদি জনপ্রিয় স্লোগানের জন্ম দিয়ে আমেথিতে বেশ জনপ্রিয়ই হয়ে উঠেছেন পীযূষ।

উত্তর প্রদেশের লখনৌ জেল‍ার নগর পঞ্চায়েত শাসিত শহর এই আমেথিতে পীযূষের স্লোগান এখনো হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে ভোটের ময়দানে।

রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে- এর আগে রাজীব গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এই আমেথি থেকে জিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের নির্বাচনে লোকসভায় আমেথি কেন্দ্রে রাহুল গান্ধী জিতেছিলেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ১৯৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে। তিনি ভোট পেয়েছিলেন  ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ১৯৫। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বহুজন সমাজবাদী পার্টির আশিষ শুক্লা পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৯৯৭ ভোট। বিজেপির অশোক সিং পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৫৭০।

যদিও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল মনে করছেন, আগের কোন হিসাবই এবার টিকবে না। এ আসনে ২৫ হাজারেরও বেশি ভলান্টিয়ার নামিয়েছে তার দল। তাই আমেথির লোকেরা এবার বিজেপি ও কংগ্রেস- দু'দলকেই উচিত শিক্ষা দেবে।
এ বিষয়ে কংগ্রেসের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি তো আরো এক কাঠি সরেস।

কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, যেখানে আমেথিতে নিজের প্রভাব ঠিক রাখতে পারছেন না, সেখানে কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী কী করে ভারতের মতো বিশাল দেশ চালানোর কথা ভাবেন।

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোন কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন রাহুল। এরই মধ্যে তার মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে গেছেন কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী। তার আগে মা ছাড়াও বোন প্রিয়ংকা গান্ধী ও বোনের স্বামী রবার্ট ভদ্রাকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।  

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর কংগ্রেসের দ্বিতীয প্রধান নেতা রাহুল জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ পোষণ করেন।

তিনি বলেন, আমেথি থেকে তৃতীয়বারের মতো  নির্বাচনে লড়ছি। আমেথির জন্য আমি গত ১০ বছর ধরে কাজ করছি। আমেথির সঙ্গে আমাদের পারিবারিক বন্ধন রয়েছে। এজন্য আমি এখান থেকে ভালভাবেই বিজয়ী হব।

তার অনুসারিরাও মনে করছেন, আমেথিতে এখনো বিশ্বাসের ইস্যুতেই ভোট হয়। আর আমেথির মানুষ গান্ধী পরিবারকে বিশ্বাস করে। তাই জয়ের ব্যাপারে তাদের কোন সংশয় নেই। তবে লড়াইটা হয়তো জমতে পারে এবার। এতো দিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের জামায়াত বাজেয়াপ্ত হওয়াই ছিলো এ আসনের অলিখিত নিয়ম। এবার হয়তো তা হবে না।

রাহুলকে হয়তো কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে। কিন্তু পরাজয়ের জন্য ওই চ্যালেঞ্জ যথেষ্ট নয়।

কিন্তু স্থানীয় কংগ্রেস যাই বলুক, রাজীব-সোনিয়া পুত্রকে চাপে ফেলতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আম আদমি পার্টির প্রার্থীর কুমার বিশ্বাস। তার পাশাপাশি রাহুলের প্রতিপক্ষ বিজেপির স্মৃতি ইরানিও। এতে করে  রাহুল তাঁর নিজের কেন্দ্রে কিছুটা কোণঠাসা বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

অনেকে বলছেন, উত্তর প্রদেশে রাহুল গান্ধীর আমেথি আসন এবার ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিজেপির তারকা প্রার্থী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে তার জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমনকি জয়মাল্য স্মৃতির গলাতেও উঠতে পারে।

আমেথি কেন্দ্রে নির্বাচন ৭ মে। কংগ্রেসের পারিবারিক আসন আমেথির দিকে তাই এখন সারা ভারত আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।