ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নদীতে মাছ নেই, পশ্চিমবঙ্গে কমছে মৎস্যজীবী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৪
নদীতে মাছ নেই, পশ্চিমবঙ্গে কমছে মৎস্যজীবী ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা: নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাছ আর সে কারণেই অস্তিত্ব সংকটের মুখে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলির মৎস্যজীবীরা। বংশ পরম্পরায় চলা এ পেশার মানুষেরা এখন আর তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এ কাজে আনতে চান না।

কারণ তাদের মতে, নদীতে মাছ প্রায় নেই। তাই জীবনযাত্রা নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলায় আছে মোট ১৮৮টি নদী। এর মধ্যে তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, জলঢাকা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিস্তা ছাড়াও যে কটি নদী ভারত এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নদী আছে।

উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে মাছ কমে যাবার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে জানান জলপাইগুড়ির জেলেরা।

জলপাইগুড়ি মৎস্য সমবায় সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত দাস জানিয়েছেন, গত ৫০ বছরে  প্রায় ৫০ শতাংশ মৎস্যজীবী কমে গেছে। অনেকেই রুটিরুজির প্রয়োজনে অন্য কাজ শুরু করেছেন। নতুনদের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

উত্তরবঙ্গের নদী থেকে গোটা পশ্চিমবঙ্গে বিগত দিনে প্রচুর মাছ যেত। বলা যেতে পারে, মাছে-ভাতে বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে উত্তরবঙ্গের নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো।

বোয়াল, মৃগেল, রুই, কাতলা, পুঁটি, বাটা, মৌরলা, শোল, বাম, চাঁদা, স্বর্ণপুঁটি বা সরপুঁটি, বাটা, চ্যালা ইত্যাদি মাছের কিছু জোগান থাকলেও সেগুলি আগের থেকে অনেকটাই কমে এসেছে। এছাড়াও বহু প্রজাতির মাছ বাজার থেকে হারিয়ে গেছে বলেও জানান মৎস্যজীবীরা।

কিন্তু কেন পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।

এই প্রশ্ন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য বিভাগে খোঁজ করলে আধিকারিকরা দাবি করেন, সরকারি প্রকল্পের অভাব নেই। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের থাকার বাড়ি, মাছ ধরার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়, নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাবার ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি বা প্রশিক্ষণ কোনই কাজে আসছে না। তাই সরকারি প্রকল্প থাকলেও এই পেশায় আসতে চাইছেন না কেউ।

এর কারণ হিসেবে মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, একাধিক নদী মজে গেছে, বেশ কিছু নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় নদীর মাঝে জেগে উঠেছে চর। আর সেই চরের কোথাও সবজি চাষ হচ্ছে, কোথায় ধান চাষ আবার কোথায় অন্যান্য জিনিসের চাষ হচ্ছে। এর ফলে জলে মিশছে কীটনাশকসহ নানা রাসায়নিক পদার্থ।

এছাড়াও ব্যাপকহারে জলাভূমি বন্ধ করে দেওয়ায় মাছের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় নদীতে এসে মিশছে বর্জ্য পদার্থযুক্ত জল, এর ফলেও মাছের পরিমাণ কমছে নদীতে।

ক্ষোভ আছে সরকারি সাহায্য নিয়েও। অনেকেই মাছ ধরার সামগ্রী পান না বলে অভিযোগ করেছেন। বয়স বেড়ে যাওয়ার পর ভাতা পাবার ক্ষেত্রেও কিছু অভাব-অভিযোগ আছে মৎস্যজীবীদের।

আর এর ফলেই বর্ষার সময় নদীতে মাছ ধরলেও বাকি সময় অন্য কাজ করতে হয়। এর ফলে অনেকেই শ্রমিকের কাজ করতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।

ফলে নদীর মাছের মতোই ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ৯ আগস্ট, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।