ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সেই তো আমরাই!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৪
সেই তো আমরাই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গেদে স্টেশন থেকে: পার্থক্যটা চোখে পড়লো তাই লিখছি। দর্শনায় বাংলাদেশ বর্ডারে যখন ইমিগ্রেশন চলছিলো তখন কতই না ঝঞ্ছাট।

সেই তো আমরাই। মৈত্রী ট্রেনে কলকাতা যাচ্ছি শ’ কয়েক যাত্রী। এরাই দর্শণায় একটুও ধৈর্য্য দেখালো না। ইমিগ্রেশনের কক্ষে নিমেষে লাইন পড়লো চারটি। কে কার আগে যাবে সে জন্য ধাক্কাধাক্কি। পেছনে থেকেও আগে যাওয়ার চেষ্টা। আর কাচের দেওয়ালের ওপারে যারা ইমিগ্রেশনের জন্য কাজ করছে তাদের মধ্যেও ঢিমে ভাব প্রকট। ফলে লাইনে অস্বস্তি, খিস্তি, চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি চললো। যে লাইনে আমি দাঁড়িয়ে সেটি এক ইঞ্চি নড়লো ১০ মিনিটে। উল্টো দিক থেকে এসে কেউ পাসপোর্ট এগিয়ে দিচ্ছে, কেউ লাইনে একজন, অথচ সঙ্গে পাসপোর্ট হাতে একাধিক, ফলে দেরি তো হবেই।

এভাবেই একপর্যায়ে নিজেকে কাচের দেয়ালের গোলাকার ফাঁকার সামনে আবিষ্কার করি। সামনে তাকিয়ে দেখি ইমিগ্রেশনে কর্মরত যুবকের মুখ ভর্তি ঘাম, নাকের ডগায় জমে থাকা ঘাম আঙ্গুলের মাথায় নিয়ে ক্যারম বোর্ডের গুটির মতো টুসকি মেরে ছুঁড়ে দিয়ে পাসপোর্ট নিতে হাত বাড়ালেন। এগিয়ে দিয়ে আস্তে করে জানতে চাইলাম, পাশের সিটটি খালি কেনো... এখানে কেউ নেই। হতাশ গলায় বললেন, ‘ছুটিতে আছেন’।

একা এতগুলো মানুষের পাসপোর্ট দেখে তাদের নম্বর কম্পিউটারে এন্ট্রি দিয়ে সত্যিই গলদঘর্ম ইমিগ্রেশনের এই কর্মকর্তা। মাথার ওপরে তাকিয়ে দেখি ফ্যানটাও বেশ দূরে। কাচের উচু দেওয়ালের কারণে তার গায়ে বাতাস লাগার কোনো কারণ নেই।

ভাবলাম এ বিষয়ের অবতারণা করে যুবকের মন আরও বিষিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ পিছনে তখনও বিশাল লাইন। এই কিউতে একজন থাকায় লাইন এগুচ্ছেও কচ্ছপ গতিতে।

নিজের কাজ যখন শেষ তখন এগিয়ে যাওয়াই সাব্যস্ত। কিন্তু বয়ষ্ক এক নারী যাত্রীকে তখন দেখলাম লাইনে আর না দাঁড়িয়ে থাকতে পেরে বসে পড়েছেন কাউন্টারের পাশেই হেলান দিয়ে।

প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছে শেষ তো হবেই। ঘণ্টা দেড়েকে শেষও হলো ট্রেন ছুটলো দর্শনা ছেড়ে। দ্রুতই সীমান্ত পার করে ঢুকে পড়লো ভারতে। এপারের ইমিগ্রেশন ও লাগেজ চেকিং গেদে স্টেশনে। যাত্রীরা নামলেন। লাগেজ নিয়ে ঢুকলেন ইমিগ্রেশনের জন্য নির্ধারিত হলের দিকে। গেটেই হাতে দেওয়া হলো ইমিগ্রেশন ফর্ম। ভেতরে সারি সারি চেয়ার পাতা। অনেকেই বসে কেউ বা লাগেজ নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ‘ফরম ভরতে’ শুরু করলেন। লাইন এগুচ্ছে যে সেটা গোড়াতেই বোঝা গেলো। পাঁচ জন করে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। তাদের শেষ হলেই ঢুকছে আরও পাঁচ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশের এক মধ্য বয়ষ্কার স্বামী ভেতরে যেতে পারলেন, আটকে গেলেন স্ত্রী। কিন্তু গেটের গার্ড নাছোরবান্দা, ছাড়লেন না। বললেন, একটু অপেক্ষা করুন, হারিয়ে যাবেন না, পেয়ে যাবেন আপনার স্বামীকে।

এসময় মনে পড়লো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের কথা। সকাল পৌনে সাতটায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে স্টেশনে গিয়ে দেখি লাইন স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লাইনের লেজে দাঁড়ালাম। এরপর ধীরে ধীরে এগুচ্ছে লাইন। সাপের মতো ঘুরে ঘুরে যাওয়া লাইনের গতি স্লথ। লক্ষ করলাম এই লাইন আসল লাইন না, যারা টু-পাইস দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন তারাই পেয়েছেন ভিতরে দ্রুত ঢুকে পড়ার প্রকৃত লাইন। লাইনের চেয়ে বেলাইনেই ঢুকছে বেশি মানুষ।

তবে এই যে এত ঝক্কি করে ভেতরে ঢোকা সেখানে ঢুকে একটু অবাকই হলাম। লাগেজ স্ক্যানিং মেশিনটি চলছে না, চালানোর চেষ্টাও নেই। মেশিনের ফিতা ও রোলারগুলোতে ধুলোর পলেস্তারা বেশ পুরু। এতো আয়োজন করে ঢুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু ভেতরে চেকিংয়ের মেশিন কাজ করছে না, সব চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। দুই কর্মকর্তা একজন টিকেট নম্বর বলছেন অন্যজন টালি খাতায় তুলছেন। এভাবেই ঢাকায় মৈত্রী ট্রেনে চেপে বসা।

ট্রেনের যাত্রীদের কথাই বলছিলাম। সেই তো আমরাই। ওপারে কেনই আমরা এতো এলোমেলো, অগোছালো। এপারে তো সবকিছুই শেষ হলো সুশৃংখলভাবে। এটা কি কেবলই সিস্টেম নাকি সচেতনতা বা অভ্যাস আর সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগের অভাব!

শেষ করি ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়ার পর গেদে স্টেশনে সেই ইমিগ্রেশন নিয়েই। সেখানেও খুব দ্রুত কাচের দেওয়ালে গোলাকার ফাঁকার সামনে নিজেকে আবিস্কার করলাম। ভেতর থেকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা জানতে চাইছিলেন, কি করবেন, কেনো এসেছেন, কোথায় কোথায় যাবেন। পেশাগত কাজে এসেছি শুনে দ্রুত বাইরে তদারকিতে ব্যস্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডাকলেন। তার দিকে আইডি কার্ডটি বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, কিছু রিপোর্টিং করার জন্য এসেছি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র পরিচয়পত্র দেখে বললেন, ও আপনি পাপড়ির সঙ্গে কাজ করেন! আমি বাংলানিউজ পড়ি, আপনারা আবার এসেছেন কাজ করতে, খুব ভালো। যান যান, বেস্ট অব লাক। কাচের দেওয়ালের ওপারের কর্মকর্তাটি দ্রুতই বুঝতে পারলেন তাকে কি করতে হবে।

বাংলানিউজের ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট জেসমিন পাপড়ি। গত নির্বাচন কাভার করতে দিল্লি গুজরাট চষে বেড়িয়েছেন। খুব ভালো লাগলো তার কথা মনে রেখেছেন ইমিগ্রেশনের কর্তা ব্যক্তিরাও। আর সেই সঙ্গে বাংলানিউজকেও।

দুই কর্মকর্তাকেই ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে গেলাম ট্রেনের দিকে। বিকেল ৫টার কথা। মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতার চিৎপুর স্টেশন পৌঁছাতে তখনো তিন ঘণ্টা বাকি।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৪

** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব

** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।