ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জঙ্গিদের ‘দম্পতি মডিউল’ কাজ করছিল বর্ধমানে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪
জঙ্গিদের ‘দম্পতি মডিউল’ কাজ করছিল বর্ধমানে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: বর্ধমান বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্ত যত এগোচ্ছে তত সামনে আসছে একের পর এক গোপন তথ্য। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বর্ধমানকাণ্ডের ফলে সামনে এসেছে, যার ধরন বেশ কিছুটা নতুন বলে মনে করা হচ্ছে।



এই বিষয়টিকে বলা হচ্ছে ‘দম্পতি মডিউল’। জঙ্গিদের প্রভাব বিস্তার এবং কাজকর্মের নতুন ধারা এই ‘দম্পতি মডিউল’। কিন্তু ঠিক কীভাবে কাজ করে এই মডিউল বা এই মডিউলের সুবিধাই বা কী?

প্রসঙ্গত: ভারতে এর আগে যেসব জঙ্গি-ডেরার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সেগুলির বেশির ভাগেই জঙ্গিরা একজন বা একাধিক ব্যক্তি মিলে কোনো জায়গায় থাকত। অথবা সাধারণ মানুষের ভিড়ে তারা মিশে থাকত।

কিন্তু বর্ধমান বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম দেখা গেল, প্রায় সব জঙ্গিরাই দম্পতি হিসেবে আস্তানা গেড়েছিল। এদের বেশিরভাগের সঙ্গেই ছিল একটি করে শিশুও।

বর্ধমান বিস্ফোরণকাণ্ডে আটক আমিনা এবং রাজিয়ার সঙ্গেও আছে দুজনের দুই শিশু।

বর্ধমানের যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল সেই বাড়িতেই থাকতেন এই দুই দম্পতি। বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ওরফে গুলশান এবং ধৃত হাশেম মোল্লার সঙ্গে থাকতেন তার স্ত্রী আমিনা ওরফে আলিমা।

তবে এখানেই শেষ নয়, সন্দেহভাজন আরেক জঙ্গি কওসরের সঙ্গেও থাকতেন তার স্ত্রী। কওসরের স্ত্রীর চিকিৎসার কাগজ পাওয়া গেছে তার ডেরা থেকে। কওসরের খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

সুত্রের খবর, প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশ সরকার কওসর এবং আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গির বিষয়ে তথ্য জানিয়েছিল দিল্লিকে। দিল্লি সেই তথ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও জানিয়েছিল।

এছাড়া আরেক জঙ্গি নাসিরুল্লাও এই ‘দম্পতি মডিউল’ মেনে কাজ করতেন। নাসিরুল্লার দুই স্ত্রী। ফাতেমা ও মঞ্জুলা। মঞ্জুলাকে নিয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ডেরা বাঁধে নাসিরুল্লা। বিস্ফোরণের পর স্ত্রীকে নিয়েই উধাও হয়ে যান তিনি।

এগুলি বাদ দিলেও বর্ধমানে আরও যে দুটি জঙ্গি-ডেরার খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা সেখানেও এই ‘দম্পতি মডিউল’–কে মেনে বসবাস করত জঙ্গিরা।

বীরভূম জেলার কীর্নাহারে যে জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানেও ‘দম্পতি মডিউল’ এর প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এখানে তার স্ত্রীর সঙ্গে বাস করত কওসরের ভগ্নিপতি কাদের।

কিন্তু কেন এই ‘দম্পতি মডিউল’ বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা? এর মূলে বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে, আত্মগোপন করার সুবিধা। সঙ্গে স্ত্রী এবং বিশেষ করে সন্তান থাকলে সেই পরিবারকে  সন্দেহের চোখে দেখবে না সাধারণ মানুষ, এমনকি পুলিশও।

এছাড়াও কোনো একজন অপরিচিতকে ভাড়া দেওয়ার থেকে একটি পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন বাড়ির মালিকরা। এর ফলে জঙ্গিদের ডেরা বানাতে সুবিধা হয়।

তৃতীয়ত, স্ত্রী জঙ্গি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হওয়ায় বাইরের কোনো লোককে ডেরাতে আসতে হয় না, এর ফলে ডেরার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা কম।

এছাড়াও আছে বেশ কিছু কারণ। যেমন সহজেই আরও একটি দম্পতিকে নিজের আত্মীয়  বলে ডেরাতে এনে রাখা যায়। জঙ্গিদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতির ক্ষেত্রে এই ‘দম্পতি মডিউল’-এ বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।

তবে ‘দম্পতি মডিউল’ এর এখানেই শেষ নয়। সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই ‘দম্পতি মডিউল’-কে যারা পরিচালনা করতেন তারাও দম্পতি। এই প্রসঙ্গে অসমের এক চিকিৎসকের খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। যিনি পেশায় একজন দাঁতের চিকিৎসক। কিন্তু তিনি এবং তার স্ত্রী সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন কওসর এবং অন্যান্য জঙ্গিদের সঙ্গে।

এই চিকিৎসক এবং তার স্ত্রী অর্থ এবং অন্যান্যভাবে এই জঙ্গিদের সাহায্য করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মনে করা হচ্ছে, এই জঙ্গিদের পরিচালনা করতেন আসমের ওই চিকিৎসক এবং তার স্ত্রী।

তবে খবরে প্রকাশ, এই ‘দম্পতি মডিউল’ এর কিছু সমস্যাও ছিল। সূত্রের খবর, রাজিয়া তার জেরার সময় জানিয়েছে, তার উপর সবসময় বোরখা পড়ে থাকা এবং ঘরের বাইরে না বেরনোর নির্দেশ ছিল মৃত জঙ্গি শাকিলের।

কিন্তু সেলাই এবং হাতের কাজে নিপুণ রাজিয়া অনেক সময়য়ই এই বাঁধা মেনে নিতে নারাজ ছিল। তাই আগের ডেরার পাঁচিল উঁচু করে দিয়েছিল শাকিল।

খবরে প্রকাশ, রাজিয়াকে জেহাদি মানসিকতায় গড়ে তোলার কাজ করেছিলেন অপর জঙ্গি আমিনা। এই জন্য শিমুলিয়ার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তাকে পাঠান হয়েছিল। এখানেই অস্ত্র চালনা শেখে আমিনা।

গোয়েন্দারা জানতে পরেছেন, রাজিয়া ওরফে গুলশান পোশাক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রেমে পড়েন শাকিলের। তার আশা ছিল, তার সেলাই করতে পারার ক্ষমতার মাধ্যমে জীবনে সে প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্ভবত অনেক পড়ে সে শাকিলের আসল পরিচয় জানতে পারে। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে আরও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে এই ‘দম্পতি মডিউল’ এর আরও তথ্য উঠে আসবে।

গোয়েন্দাদের অনুমান, ভারতে আরও বেশ কিছু জায়গায় এই ‘দম্পতি মডিউল’ অনুসরণ করছে জঙ্গিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ১৩ অক্টোবর, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।