আলিমুদ্দিন স্ট্রিট (কলকাতা) থেকে: নির্বাচনে জয়লাভের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছিলেন, ‘বদলা নয়, বদল চাই’ কিন্তু তৃণমূল পরিবর্তনের নীতি থেকে সরে এসে বদলার রাজনীতি শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতা থেকে ৩৪ বছর পর বিদায় হওয়া কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট) মঙ্গলবার একথা বলেছে।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটি ও বামফ্রন্টের পৃথক বৈঠক শেষে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মঙ্গলবার রাতে দলের সিদ্ধান্তের এসব কথা জানান।
বিধানসভা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত রকমের খারাপ ফলাফল হলেও হতাশ না হয়ে শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত অধিকার এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংগ্রাম জারি রাখার অঙ্গীকার করেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট)।
মঙ্গলবার সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে মুজাফফর আহমেদ ভবনে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট যে আন্দোলনের পথেই থাকবে তা এদিন বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে আরও স্পষ্ট হয়ে যায়।
বামফ্রন্টের বৈঠকে মূল্যবৃদ্ধি এবং পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনের কর্মসূচির কথাও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে সিপিআই(এম)-র রাজ্য কমিটির বৈঠকে, নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস যে হামলা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাজ্যে শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য মানুষকে সমবেত করার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
এই প্রসেেঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা নতুন সরকার গড়তে চলেছে, তারা মুখে যা বলেছিল, এখনো পর্যন্ত তাদের কাজের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। ওরা মুখে বলেছিল ‘বদলা নয়, বদল চাই। ’ কিন্তু বাস্তবে জেলায় জেলায় হামলা আক্রমণ করছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। তৃণমূলের উচিত, তাদের ঘোষণামতোই আচরণ করা। ’
বিধানসভা নির্বাচনের পরে এদিনই প্রথম সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকম-লীর সদস্য বিনয় কোঙার।
রাজ্য কমিটি রাতে লিখিত বক্তব্যে জানায়, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ফলাফল অপ্রত্যাশিত রকমের খারাপ হয়েছে। এই ফলাফলের বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা পার্টির সর্বস্তরেই হবে।
রাজ্য কমিটি জুন মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচনী ফলাফলের পর্যালোচনায় বৈঠক করবে।
প্রাথমিকভাবে রাজ্য কমিটি মনে করছে, রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বামবিরোধীদের পরিবর্তনের স্লোগানে প্রভাবিত হয়েছেন। এই ফলাফল তার প্রতিফলন। ফলাফলের অন্যান্য সমস্ত রকম উপাদান পার্টিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বৈঠক শেষে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, ‘২০০৮-এ পঞ্চায়েত এবং ২০০৯-এ লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ফল খারাপ হওয়ার পরে কারণগুলি চিহ্নিত করা হয়েছিলো। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে সংশোধনাত্মক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিলো। ধীরে ধীরে পার্টি ও বামপন্থী সমর্থকদের সমবেত করে রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক মানুষ বামফ্রন্টের পক্ষে প্রচারাভিযানেও শামিল হয়েছিলেন। বামফ্রন্টের জনসভা, মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচিতে মানুষের বর্ধিত সাড়া পাওয়া গিয়েছিলো। তার ভিত্তিতেই অনুমান করা হয়েছিলো অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের পথে এগনো সম্ভব হবে। সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। ’
বামফ্রন্টের বিবৃতিতে নির্বাচনে জয়লাভ করা তৃণমূল কংগ্রেস জোটের প্রতি অভিযোগ করে আরও বলা হয়, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই জেলায় জেলায় তৃণমূল সন্ত্রাসের অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় এবং বাঁকুড়ার তালডাংরায় পার্টির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিহত হয়েছেন। বর্ধমানের রায়নায় পার্টি সমর্থক মহিলা খুন হয়েছেন। বিশেষত পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলীতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী পার্টি অফিসগুলি আক্রমণ করছে, ঘর লুট, বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের গ্রামছাড়া করা হচ্ছে। অন্যান্য অনেক জেলাতেই পার্টি অফিস আক্রান্ত হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়নের অফিসে আক্রমণ হয়েছে, অনেক জায়গায় ধান লুট হয়েছে, খেতমজুরদের মজুরি কেটে নেওয়া হচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঙ্গামা হচ্ছে, ছাত্র সংসদের ঘর জোর করে দখল করা হচ্ছে। নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মাওবাদী-তৃণমূলীরা জোর করে সাধারণ মানুষকে বলপূর্বক আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করছে। ক্লাব, লাইব্রেরি, সামাজিক সংগঠনগুলি আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের উপর শ্লীলতাহানিসহ অকথ্য অত্যাচার চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১১