ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

একাত্তরের স্মৃতিচারণে আকাশবাণী কর্মকর্তা

‘মনে হয়েছিল, রাইফেল নিয়ে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়ি’

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
‘মনে হয়েছিল, রাইফেল নিয়ে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়ি’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: বাংলাদেশ সরকারের ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’প্রাপ্ত আকাশবাণী কলকাতার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপেন তরফদার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা।

তার স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে কলকাতায় এক কোটি গৃহহীন অসহায় বাংলাদেশি শরণার্থীর যন্ত্রণা, পাকিস্তানি সেনাদের হাতে স্বামী হারানো তরুণীর কান্না, ছেলে হারানো মায়ের হাহাকার, আহত মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্নাত শরীরের মধ্যে জেগে থাকা মুষ্টিবদ্ধ হাত।



তিনি জানাচ্ছিলেন কিভাবে সেসব যন্ত্রণাকাতর মুখ ও তাদের কথা রেকর্ড করে এনে আকাশবাণী কলকাতার ‘সংবাদ বিচিত্রা’ অনুষ্ঠানে প্রচার করতেন।

সেই সময় আকাশবাণী কলকাতা হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ প্রচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। উপেন তরফদার, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়সহ সংবাদ বিভাগের আরও বেশ কয়েকজন পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়টায় একটানা আকাশবাণীতে কাজ করেছেন। এমনকি নির্ধারিত সাপ্তাহিক ছুটিও নেননি তারা।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটা ঘটনা বলার সময় শিউরে উঠলেন উপেন তরফদার। বললেন, ‘ঘটনাটি এখনও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে সময় গুলিতে আহত একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাকে আনা হচ্ছিল সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ হাসপাতালে। এমনই একদিন আমি টেপ রেকর্ডার নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাজির হয়েছিলাম বনগাঁ হাসপাতালে। উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তুলে ধরা। এর মধ্যে খবর এলো, এক গুলিবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে আনা হয়েছে হাসপাতালে। ছুটে গেলাম...’।

বলতে বলতে তার গলা ভারি হয়ে উঠছিল। উপেন তরফদার বলতে লাগলেন, ‘যুদ্ধের মাঠে-ময়দানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে করতে ততোদিনে এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। গিয়ে দেখি, যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন গুলিবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা যুবকটি। গায়ের জামা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ডাক্তার জরুরিভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি হচ্ছেন। ছেলেটিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না সে। একটানা বলে যাচ্ছিলেন, ‘আমাকে আপনারা বাঁচান, আমাকে বাঁচান। আমার মা, বাবা, ভাই, বোন- সবাইকে ওরা শেষ করেছে। আমি ওদের ছাড়বো না। আমি বদলা...। কথা শেষ করতে পারেননি ছেলেটি। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি’।

সেদিন ভেজা চোখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তরুণটির চোখের পাতা বন্ধ করে দিয়েছিলেন আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক। বলতে বলতে তার মুখে ভেসে উঠল তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। বললেন, ‘বলা হয়, সাংবাদিকদের আবেগ থাকতে নেই। কিন্তু তারাও তো মানুষ। সেদিন ওই যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল, একটা রাইফেল নিয়ে আমিও ঝাঁপিয়ে পড়ি। তারপর যা হওয়ার হবে’।

** নিয়াজির আত্মসমর্পণে কলকাতা ভেসেছিল আবির-আনন্দাশ্রুতে
**  'খচ্চরের পিঠে চড়ে পথ পেরিয়েছিলাম, বাকি পথ হেঁটে'
** সব হুমকি উড়িয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় ভারত
** পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ছিল রাজধানী স্থানান্তরের খবর
**‘শুধু বুঝতে পেরেছিলাম, বড়ো কিছু ঘটতে চলছে’
** শিশুটি দৌড়াচ্ছিল আর বলছিল-‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’
** সেই গানের ইতিহাস: শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের...
**  ‘সেদিন ছিল আমাদেরও বিজয়ের দিন’

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
ভিএস/আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।