কলকাতা: মহানদীর পাড়ে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে লিম্বু বস্তিতে গত মঙ্গলবার একটি চিতাবাঘ ঢুকে পড়ে। নদীর অপর পাড়েই মহানন্দা অভয়ারণ্য।
বন থেকে নদী পেরিয়ে সাতসকালে বাঘটি বস্তিতে হামলা চালায়। চিতা বাঘকে সামলাতে দিনভর সেখানে চলে হুলুস্থুল কাণ্ড।
এ কাণ্ডে চিতাবাঘের আক্রমণে আহত হন ১১ জন। আর বনবিভাগের চেতনানাশক গুলিতে অজ্ঞান বাঘও শেষমেশ ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানায়, প্রায় সারা দিন ধরেই বন বিভাগের কর্মী ও এলাকার মানুষের সঙ্গে চিতাবাঘের হামলা-পাল্টা হামলা আর লুকোচুরির খেলা চলে।
অবশেষে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ বনরক্ষীরা ঘুমপাড়ানি গুলি চালিয়ে বাঘটিকে অজ্ঞান করে। রাতে সুকনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে জখম বাঘটির মৃত্যু হয়।
তারা আরও জানান, সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ চিতাবাঘটি বস্তির মানুষের নজরে পড়ে। ওই সময় চিতাবাঘটি সবার চোখের সামনে দিয়ে কয়েক লাফে পাঁচিল ঘেরা ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
এর মধ্যে চারদিকে শহরে চিতাবাঘ ঢোকার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ওই ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর দিলীপ সিংও ঘটনাস্থলে চলে আসেন।
চিতাবাঘটি যে ঝোপের মধ্যে লুকিয়েছিলো তার পাশের পাঁচিল ঘিরে বেশ কয়েকটি পরিবারের বাস। তারা বাঘটিকে দেখার জন্য যে যার বাড়ির টিনের চালে উঠে পড়েন।
চিতাবাঘ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা তাদের জানা ছিল না। বেশ কয়েকবার ওই চাল লক্ষ্য করেই বাঘটি লাফ দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালায়। ওদিকে ছবি তোলার জন্য বেশ ঝুঁকি নিয়েই টিনের চালে উঠে পড়েন চিত্র সাংবাদিকরা।
বাঘটিকে ধরতে গিয়ে প্রথম আহত হন শালুগাড়া রেঞ্জের গাড়ির চালক কিশোর প্রধান। বাঘটি ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। গুরুতর আহত হন তিনি।
পরে বনকর্মী সন্তু থাপার মাথার হেলমেটে থাবা মেরে খুলে ফেলে বাঘটি। পরে মাথা চেপে ধরে দু’পায়ের থাবা দিয়ে। সেইসঙ্গে তার বন্দুকের বাটও কামড়ে ধরে।
এছাড়া আহত হন উজ্জ্বল মাঝি, বিন্দু তামাঙ ও অরবিন্দ নাগ বলে আরও তিনজন।
এর মধ্যে বাজি পটকা ফাটানো হয়। মশাল জ্বালানো হয়। তবু ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসেনি বাঘ।
এদিকে ঝোপের ভেতর একটি কুকুরকে ধরে ফেলে বাঘটি। পাঁচিল ঘেরা ঝোপের মধ্যেই কুকুরটিকে চেপে ধরে রাখে। তবে বাঘটা একটু অসতর্ক হতেই কুকুরটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এর পরেই বাঘটি লাফিয়ে পড়ে এক বনকর্মীর উপর।
এরই মধ্যে বিরাট পুলিশ বাহিনীও এসে পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। বাঘটিকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া চালানো হয়।
সন্ধ্যে ৬টা ১০মিনিটে পর্যন্ত বাঘে মানুষে লুকোচুরি খেলা চলে। অবশেষে ঘুমপাড়ানি গুলিতে আচ্ছন্ন বাঘটি ধরা পড়ে।
পরে জাল দিয়ে বাঘটিকে পেঁচিয়ে ফেলা হয়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন এলাকাবাসী।
এদিকে, বাঘটিকে দেখতে ছুটে আসেন পৌর করপোরেশনের মেয়র ও ডেপুটি মেয়রও। বাঘটিকে নিয়ে যাওয়া হয় সুকনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানেই রাতে চিতাবাঘটি মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১১