ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সোহরাওয়ার্দীর পারিবারিক কবরস্থানের জীর্ণদশা

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১১

কলকাতা: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী। এই কলকাতাই ছিল তার রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র।

দেশভাগের পর চলে যান তৎকালীন পূর্ব বাংলায়। শের-ই বাংলা ফজলুল হকের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করতেন।

কলকাতার থিয়েটার রোড বর্তমান শেক্সপিয়ার সরণীর তার বাসভবন অনেকে আগেই চলে গেছে ভূমিদস্যুদের কবলে। এখন সেখানে বহুতল বাড়ি। যদিও কলকাতায় তার নামে পার্কসার্কাসের সড়কটি খুঁজে বের করা দুস্কর। সড়কাটির নাম সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউ।

একদা কলকাতার এই ঐতিহাসিক মানুষটির শেষ পরিচয়টি এবার কালের গর্ভে বিলীন হবার পথে। দক্ষিণ কলকাতার পার্কসার্কাসের কাছে ৩২ গোবরা গোরস্থান রোডে তাদের পারিবারিক কবরস্থানটি আজ ভগ্নপ্রায়। ৪০ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে ওঠা এই কবরস্থানটি একদা পরিচিত ছিল তৎকালীণ কলকাতার মুসলিম বিদ্যজনদের কবরস্থানরূপে।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পিতা এখানেই জমি কিনে তৈরী করেছিলেন তাদের পারিবারিক কবরস্থান। ৮০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া এই কবরস্থানে আছে সোহরাওয়ার্দী পরিবারের ১০টি কবর।

প্রতিটি কবরই মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধানো ছিল। কিন্তু এখন একটি পাথরও নেই। রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে কবরে গাত্র থেকে চুরি হয়ে গেছে সবকটি পাথর। মূল ফটক থেকে কবরস্থান পর্যন্ত আসার ৭০ ফুট সড়কটিও তারা পাথর দিয়ে তৈরী করে ছিলেন। যা আজও কিছুটা আছে।

জমিটি জুড়ে ভরে গেছে আগাছায়। কবরে ফলক লেখা নাম উঠে গিয়েছে। অনেক কষ্ট করে পড়া গেল দুটি নাম। একটিতে লেখা আছে- স্যার হাসান সোহরাওয়ার্দীর সন্তান হাসান মাসুদ ২১ জানুয়ারি ১৯২৮, আর একটিতে স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী জজ, কলকাতা হাইকোর্ট। প্রত্যেকটি কবরেই আরবি, উর্দু ও ইংরেজিতে লেখা আছে।

এই কবরস্থানটিতে শায়িত আছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতি মুজাফফর আহমেদ, কমিউনিস্ট নেতা আবদুল্লাহ রসুল, মুহম্মদ ইসমাইল ও উপমহাদেশের বিখ্যাত সেতার বাদক বেলায়েত খান সাহেব। এদের প্রত্যেকের কবরগুলি নিয়মিতভাবে রক্ষনাবেক্ষণ হয়।

কিন্তু সোহরাওয়ার্দী পরিবারের কবরস্থানটির কোন রক্ষনাবেক্ষণ হয়না। এই গোরস্থানটির দায়িত্বে কলকাতা পৌরসভা।

স্থানীয় কাউন্সিলার মনি রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কলকাতা পৌরসভার পক্ষ থেকে এটির গুরুত্ব জানি, কিন্তু ধর্মীয় কারণেই আমরা অপারগ। কারণ, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে আবেদন না করলে আমাদের কোন অধিকার নেই এটির সংরক্ষণ করার। যদি তারা যোগাযোগ করেন তাহলে আমরা সংস্কারের হাত দেব।
 
আমরা ভুলতে বসেছি, এই পরিবারগুলিকে যারা একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার। প্রশ্নজাগে কলকাতার বুক থেকে কি মুছে যাবে সোহরাওয়ার্দী পরিবারের শেষ স্মৃতিচিহ্ন টুকু।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।