ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আগরতলার ‘বিশেষ ঝাল চা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪১, অক্টোবর ১০, ২০১৬
 আগরতলার ‘বিশেষ ঝাল চা’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আগরতলা (ত্রিপুরা, ভারত) থেকে ফিরে: উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বহুজনের কাছে ধর্ণা দিয়েছি, একটি চাকরির জন্য। চাকরি মেলেনি।

পরিবারের সদস্যদের চোখে চোখ রাখতে পারিনি। হতাশায় দিশেহারা হয়ে পড়লাম। পরে কোনো উপায় না পেয়ে চা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মনকে সান্ত্বনা দিলাম, ‘চুরি’ তো আর করছি না’।  

আগরতলার ব্যস্ততম শকুন্তলা সড়ক। এ সড়কের সিটি সেন্টারের সামনে নিজের ‘স্পেশাল স্পাইসি টি’ স্টলে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরেন রঞ্জন কুমার মজুমদার।

কথা বলতে বলতেই কাপে গরম জল ঢালেন রঞ্জন। দিলেন চা’য়ের পাতি ও চিনি। এরপর কাঁচা মরিচ নিয়ে তা টুকরো টুকরো করে কেটে দিয়ে দিলেন চা’য়ের মধ্যে। তৈরি হয়ে গেলো ‘স্পেশাল স্পাইসি রেড টি’। আগরতলায় লাল চা মানেই যেন রঞ্জনের ‘ঝাল চা’! এটি এখন শুধু রঞ্জনের টি-স্টলে সীমাবদ্ধ নেই, শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ চা’য়ের প্রচার ও প্রসার হয়েছে বেশ।

বলা চলে গোটা আগরতলায় বিখ্যাত হয়ে গেছে ‘স্পেশাল স্পাইসি টি’। বিশেষত্ব হচ্ছে এটি ‘ঝাল চা’। এক শিক্ষিত বেকার যুবকের আবিষ্কার এই চা আগরতলাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকরাও এই ঝাল চা পান করেই ফেরেন। খ্যাতি অর্জন করেছেন ঝাল চা’য়ের জনক রঞ্জন কুমার মজুমদার।  

ইতোমধ্যে অভাবকে জয় করেছেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এ পেশায় পুরোপুরি সফল, স্বাবলম্বী এই মানুষটি। একমাত্র মেয়ে নিবেদিতা মজুমদারকে বিএসসি নার্সিং পড়িয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর আর আর নার্সিং কলেজে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবার যেন সুখের নিসর্গ।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার গান্ধিঘাট এলাকার মৃত. গিরিন্দ্র মজুমদারের ছেলে রঞ্জন কুমার মজুমদার ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ভাগ্যে চাকরি না জোটায় অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকাটা রঞ্জন কুমার মজুমদারের কাছে লজ্জাজনক বলে মনে হয়েছে সেই সময়। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল তাকেই ধরতে হয়েছে।

২০১১ সালের শুরুতে আগরতলা শহরতলীর ফুটপাথে স্পেশাল স্পাইসি টি (বিশেষ ঝাল চা) বিক্রি শুরু করেন। দিনে দিনে গোটা শহরে ওই চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তার ওই বিখ্যাত ঝাল চা পান করতে দোকানের সামনে ভিড় জমে চা পিপাসুদের। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রঞ্জন মজুমদারের টি-স্টলে যেন লাইন পড়ে যায়।

রঞ্জন কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, ঝাল চা বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। প্রতিদিনের খরচ বাদে তার লাভ থাকে ৫-৬শ’ টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
পিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।