কলকাতা: পাহাড়ে দুর্যোগ কাটলেও আতঙ্ক কাটেনি মানুষের। মঙ্গলবার মেঘ কেটে রোদ উঠলেও মানুষ শঙ্কিত।
ঘরবাড়ি ভাঙার খবর আসছে। বহু জায়গায় ধস নেমেছে। দিনভর বন্ধ থাকার পর সোমবার বিকেলে পাহাড়ে যাওয়ার সরাসরি সড়ক খুলেছে। পাহাড়ের বহু মানুষের আত্মীয়-স্বজন সিকিমের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছেন। তাদের খবর পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন মানুষ।
রোববার ভূ-কম্পনে দার্জিলিং বাদে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চা বাগানগুলোর আবাসনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ১৯টি শ্রমিক আবাসন মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে গেছে। ৪৮টি আবাসনে ফাটল ধরে।
জলপাইগুড়ি শহরের ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার। ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। রাজবাড়ির সিংহদুয়ার যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। জলপাইগুড়ি পৌরসভার ২৫টি ওয়ার্ডেই ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
ভূ-কম্পনের ফলে দেওয়াল চাপা পড়ে এবং গাছ ভেঙে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ১৫ জন মহিলাকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ময়নাগুড়ি-মালবাজার রেলওয়ে আন্ডারপাস এবং ৩১সি জাতীয় সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে।
মালদহ জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলখানার সংশোধনাগারে। মালদহের গাজোল, হরিশচন্দ্রপুর এবং রতুয়াতে বেশ কিছু কাঁচাবাড়ি ভেঙে গেছে। বেশ কিছু আবাসনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কার্শিয়াংয়ের গিদড়ে পাহাড়ে রোববার সন্ধ্যার ভূমিকম্পে সোমবার গভীর রাতে দীপক ইয়াং গেল, সুদীপ লামা ও রাজীব লামার বাড়ি ধসে গেছে। ভূমিকম্পের সময়ই পাহাড় থেকে পাথর গড়াতে শুরু করে মূল সড়ক থেকে বেশ উঁচুতে ওদের বাড়ি। যে কোনও সময়ই বিপদ নেমে আসতে পারে বুঝতে পেরে তারা অন্যত্র সরে যান।
এ এলাকার মানুষদের চোখে মুখে এখনও আতঙ্ক। ডোমা লামা, সুভদ্রা দুরাল, শ্যামু রসৌলি সংবাদমাধ্যমে বলেন, পাহাড়ের মানুষ অনেক ধস দেখেছে। অনেক বিপর্যয় দেখেছে। কিন্তু রোববারের ভূমিকম্পে তাদের মনে একটা প্রবল আতঙ্কের ছাপ রেখে গেছে।
তারা বলেন, সবে সন্ধ্যে নেমেছে পাহাড়ে। বৃষ্টিও হচ্ছিল। হঠাৎই প্রবল দুলুনি অনুভব করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সড়কে চলে আসেন তারা।
আশপাশের অন্যান্য বাসিন্দারাও ভয়ে বাইরে চলে আসেন।
কার্শিয়াং শহরের বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দু-তিন তলার বাসিন্দারা এই ভূমিকম্পের জন্য স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কিত।
এদিকে কার্শিয়াং-দার্জিলিং ৫৫নং জাতীয় সড়কে বেশ কয়েকটি ধস নামার জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেপয়ঝোড়াতে বড় আকারের ধস নেমেছে।
ভূমিকম্পের ফলে পাহাড়ের অনেক জায়গাতেই মাটি আলগা হয়ে গেছে। পাথরও নেমে আসছে। এই কারণে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পংয়ে বিদ্যুৎ এসেছে। মোবাইল ও টেলিফোন পরিষেবাও কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে।
ধস নেমেছে দুধিয়া, পেংভিউ, সেন্ট মেরিজ নরবং, তিলধারিয়া এসব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কালিম্পংয়ের নিমবং, লোয়ার কাফের, রেলি পালা রোডেও ধস নেমেছে। দার্জিলিংয়ের লেবংয়ে প্রায় ৭০ জনকে সেনাবাহিনীর হাসপাতালে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিংয়ের ইডেন হাসপাতালে ফাটল ধরায় রোগীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কালিম্পং মহকুমার লাভা, আলগাড়া, কাপড় এলাকায় ৫৭টি বাড়ি ধসে পড়েছে। বহু প্রাচীন একটি মসজিদ ও চার্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লেপ্রোসি কম্পাউন্ড থেকে ২৫টি পরিবারকে সোমবার সন্ধ্যায় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
কালিম্পংয়ে ট্রেজারি বিল্ডিংয়েও ফাটল ধরেছে। ফলে আতঙ্কে কর্মচারীরা ওই বিল্ডিংয়ে কাজ করতে ঢোকেননি। সাময়িকভাবে টাউন হলে ওই দপ্তরটি সরিয়ে আনা হচ্ছে, সোমবার বিকেলে শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং যাওয়ার সরাসরি সড়কটি খুলে গেছে।
কালিম্পং থেকে গ্যাংটক সরাসরি যাওয়ার সড়ক সোমবার সন্ধ্যে পর্যন্ত খোলেনি বলে জানা গেছে। বর্ডার রোড অর্গানেইজেশান ধস পরিষ্কার করার কাজ করছে।
কালিম্পংয়ের লাভা, লোলেগাঁও, জলঢাকা অঞ্চল থেকে আটকে যাওয়া পর্যটকদের শিলিগুড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পার্বত্য অঞ্চলে বেড়াতে আসা বেশ কিছু পর্যটক তাদের ভ্রমণ বাতিল করেই চলে আসছেন।
এদিন শিলিগুড়িতে সকাল হতেই বহু মানুষ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নিতে বেরিয়ে পড়েন। হাসপাতালেও অনেকে ভিড় করেন। শিলিগুড়িতে বহু বাড়িতে ফাটল ধরেছে, ভূমিকম্পে বহু বাড়ির দামি সামগ্রী ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অফিস আদালতে সর্বত্র একই আলোচনা। এর মধ্যে নানা গুজবও রটছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১