কলকাতা: মাত্র ৫৭ বছর বয়সে জীবনদীপ নিভে গেলো কমরেড সক্রেটিসের। দীর্ঘদিন পেটের অসুখে ভুগতে থাকা সাবেক ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার শনিবার শেষরাতে মারা যান।
একদিকে ফুটবল, অপরদিকে মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারা, কিউবার নায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত সক্রেটিস ছিলেন আদতে চিকিৎসক। কিন্তু মাঠের বাইরে নিজেকে তিনি সংগ্রামের প্রতীক বলেই মানতেন।
ফুটবলজীবনে বিশ্বকাপ পাননি। উপরন্তু বিশ্বকাপ না পাওয়ার পেছনে অনেকেই দায়ী করেন তাঁর পেনাল্টি মিসকে। এরপরও সক্রেটিসের বিশ্ব ফুটবলে অন্য মাত্রা এনেছিলেন। দুঃখের কথা, ফুটবলের বাইরে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান মৃত্যুকে তাঁর দুয়ারে টেনেছে।
ব্রাজিলের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৬০টি ম্যাচ। গোল করেছেন ২২টি। কিন্তু বিশ্বকাপ হাতে ধরতে পারেননি সক্রেটিস। এই আক্ষেপ তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে। ফুটবল তাঁর রক্তে। খেলা ছাড়ার পরে ব্রাজিল লিগে গ্যারফোর্থ টাউনের জার্সি গায়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই।
সবসময় সুন্দর ফুটবলের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। নিজে খেলতেনও সেভাবেই। ১৯৭৪-এ বোটাফোগো ক্লাবের জার্সি গায়ে তাঁর ফুটবলে আত্মপ্রকাশ।
ফুটবল ছাড়ার পর ব্রাজিলের বিভিন্ন সংবাদপত্রে ফুটবল ও রাজনৈতিক বিযয় নিয়ে কলাম লিখতেন। বিভিন্ন সভায় গিয়ে বক্তৃতা রাখতেন। চিকিৎসক হিসেবে দারুণ নামডাক না থাকলেও দীন, দুঃখীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। রোজ সকালে চালাতেন চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি। দিতেন রুগীদের বিনা পয়সায় ওষুধ। ‘ডক্টর সক্রেটিস’ নামেও ব্রাজিলের লোক তাঁকে চিনতেন।
ব্রাজিলের স্বৈরাচারী মিলিটারি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ভূমিকা আজীবন মনে রাখবেন সে দেশের মানুষ। সেই শাসনের প্রভাব পড়েছিলো ফুটবল মাঠেও। ক্লাব কর্তাদের স্বৈরাচারী মানসিকতার বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়াতেন। মানতেন না তাঁদের নির্দেশ। ফুটবল মাঠের স্বৈরাচারী মানসিকতার বিরুদ্ধে তাঁর একাধিক ঘটনাও রয়েছে।
এক সময় তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন বামপন্থী আন্দোলনে। ব্রাজিলের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আর সারাজ্জবাদ বিরোধী আন্দোলনের মুর্ত্ত প্রতীক ছিলেন কমরেড সক্রেটিস। ফুটবল জীবনের বাইরে এসে মিশে যেতেন জনতার সাথে রাজপথের আন্দোলনে।
মাত্র এক বছরের জন্য তিনি গিয়েছিলেন ইতালির ফিওরেন্তিনায় খেলতে। দেশ ছেড়ে বিদেশে তাঁর খেলতে ভালো লাগেনি। ফিরে এসেছেন একবছর পরই। ইতালি থেকে ফিরে আসার পর নিজস্ব কলামে লিখেছেন, ‘ওখানে অনুশীলন করতে ভালো লাগতো না। ফুটবল নয়, ওখানকার সংস্কৃতি, সমাজ নিয়ে জানতেই সময় কেটে যেতো। অনুশীলন শুরু হলেই ভাবতাম কখন শেষ হবে। ’
মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি ব্রাজিলিয়ান সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলে গেছেন, ‘মত্যুর পর তুমি কী লিখলে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। বেঁচে থাকতে কী করলে সেটাই বিচার্য। ’
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বসে মৃত্যু পথযাত্রী কোনও মানুষ এমন কথা বলতে পারেন, সেটা কল্পনাতেও কেউ আনতে পারেননি। সেই সাক্ষাৎকারে কমরেড বলেছিলেন, ‘জীবনকে সবসময় যতনে রাখতে হয়, আর যেটা আমি অনেক আগেই পথের প্রান্তে ছুঁড়ে দিয়ে এসেছি। ’
ভারতীয় সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১