আগরতলা থেকে: ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ করে একযোগে দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র দূর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগরতলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ ডিগ্রি গ্রহণের পর দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে বহুমাত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব ও ভূমিকা এবং এ অঞ্চলের (উপমহাদেশ) শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উল্লেযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এ ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ডিগ্রি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ত্রিপুরাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ। ’
‘দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের সবচেয়ে বড় শক্র দারিদ্র’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ দারিদ্র দূর করতে চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে কারো একার পক্ষে এ দারিদ্র দূর করা সম্ভব না। এজন্য আমি সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের ওপর গুরুত্ব দেই। আমরা সকলে মিলে যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারি। ’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রথা অনুযায়ী ইংরেজীতেই বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। ইংরেজী বক্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখন বাংলায় কথা বলবো। আশপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তারা বাংলায় আমার কথা শুনতে চান। তাছাড়া আমার ভাষাও বাংলা। এ ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘ইংরেজীতে কথা বলছিলাম। বাংলায় বলতে না পারা পর্যন্ত যেন আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। ’
এ সময় মিলনায়তনের ভেতরে ও বাইরে হাজার হাজার অতিথি করতালি দিয়ে তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে আপনারা সাহায্য করেছেন, খাদ্য-বস্ত্র দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তা আমরা কখনোই ভুলবো না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে দাঁড়িয়ে আমি কথা বলছি, এখানে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প ছিলো। এখানে আসা আমার জন্য গৌরবের। ’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের ওপর যেভাবে অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছিলো তা বিশ্ববাসী জানে। আপনারা সে সময় যে সহযোগিতা করেছেন আমরা তা ভুলবো না। আপনাদের এখানে অনেক লোক জীবনও দিয়েছেন। তাছাড়া আগরতলার নাম আমাদের কাছে অনেক পরিচিত। ’
ছয় দফার দাবিতে উত্তরাল গণ-আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেওয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। দুর্বার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৬৯এ বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। আর সেই থেকে আগরতলা নামটি আমাদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সম্মান আমি আজ পেলাম, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়-সকল পাওয়ার মধ্যে আমি পেয়েছি অমূল্য উপাদেয়। ’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই সম্মান, ভালোভাসায় দেশের মানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে আমি আরো প্রেরণা পাবো। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ তীর্থভূমিতে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি এজন্য আমি মহা-আনন্দিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২