ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আগরতলার পথে পথে শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা ভালোবাসা

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২
আগরতলার পথে পথে শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা ভালোবাসা

আগরতলা থেকে: ত্রিপুরাবাসীর প্রাণঢালা সম্বর্ধনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তনয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজ্য সরকারের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তার পাশাপাশি পথে পথে সাধারণ মানুষ প্রাণঢালা ভালোবাসা জানিয়েছেন দুই দিনের সফরে আগরতলার আসা শেখ হাসিনাকে।



সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে আসাম রাইফেলস মাঠে লাখো জনতার বিশাল সমাবেশে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয় তাকে।

বিশাল মাঠে নারী, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, পাহাড়ি, আদিবাসী, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এসেছিলেন শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা জানাতে।

এদের অধিকাংশের হাতে ছিলো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। বিশেষ করে শিশুদের হাতে হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

চল্লিশ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে দিল্লী যান। সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে এই একই ধরনের সম্বর্ধনা জানিয়েছিলো ভারতবাসী।

আজ ৪০ বছর পর তারই কন্যা শেখ হাসিনাকে ভারতের মাটি আগরতলাতে তেমনি সম্বর্ধনা দেওয়া হলো।

সমাবেশ শেষে জনতাকে বলতে শোনা গেলো- আশি দশকের প্রথম দিকে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আগরতলায় আসার পর যত মানুষ হয়েছিলো এরপর আর এতো জনসমাবেশ আগরতলায় দেখা যায়নি। এবার শেখ হাসিনার বেলায় তা হলো।
 
ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণ করে স্থানীয় সময় তিনটার পর শেখ হাসিনা যখন আসাম রাইফেলস মাঠের সম্বর্ধনা মঞ্চে এসে ওঠেন তখন কানায় কানায় পূর্ণ মাঠে সমবেত লাখো জনতা করতালি দিয়ে এবং হাতে ধরা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে তাকে অর্ভথ্যনা জানায়।

এর আগে দুপুর গড়াতে না গড়াতেই ত্রিপুরার দূর দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ এই মাঠে শেখ হাসিনার আগমনের অপেক্ষা করছিলেন।

সম্বর্ধনা স্থলে জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন দিক থেকে আসা জনতার ঢল এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

স্টেট গেস্ট হাউজ থেকে আসাম রাইফেলস মাঠে আসার পথেও রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার জনতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িযে থাকে। একই একই দৃশ্য দেখা যায় সকালে গেস্ট হাউজ থেকে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে। তখনও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই ধারে অপেক্ষমান হাজার হাজার মানুষ হাত নেড়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানায়।

আগরতলা নাগরিকমণ্ডলীর পক্ষে পুর পরিষদ আসাম রাইফেলস মাঠে এই সম্বর্ধনা সভা আয়োজন করে।

স্কুল শিক্ষার্থীদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে যখন আপনি.....’ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে....’ গান দু’টি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, গভর্নর ডি ওয়াই পাতিল, আগরতলা পুর পরিষদের চেয়ারপারসন প্রফুল্ল জিত সিংহা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মণি প্রমুখ।
 
সম্বর্ধনা সভায় শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। এরপর শেখ হাসিনাকে মানপত্রসহ শাল (চাদর) উপহার দেওয়া হয়।

সম্বর্ধনা সভায় মানিক সরকার একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘৪৭ এর দেশ বিভাজনের ফলে ভৌগলিক ফারাক তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু আমাদের মননে, সংস্কৃতিতে মিল রয়ে গেছে। আমরা এক সঙ্গে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে চাই। ’

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বয়ে এনেছি। ত্রিপুরাবাসীকে আমরা সব সময় শ্রদ্ধা সঙ্গে স্মরণ করি, সেই সঙ্গে ভারতবাসীকেও। তারা লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য, বস্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এখান থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। ৪০ বছর পরও আমরা তা ভুলিনি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্ধু তাকেই বলে বিপদে যে পাশে দাঁড়ায়। আপনারা আমাদের বিপদের বন্ধু। আপনাদের কথা আমরা ভুলবো না। ’

তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় যে সম্মান দেখিয়েছে সেটা আমার নয়, গোটা বাংলাদেশের জনগণের। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের একই শত্রু তা হলো দারিদ্র। এই অঞ্চলকে দারিদ্রমুক্ত করতে চাই। ’
 
‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত আগরতলায় অনেক দিন ধরেই আসার ইচ্ছা ছিলো’ বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে এসে আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা ভোলার নয়। ’

সব শেষে শেখ হাসিনা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন ‘রিক্ত আমি সিক্ত আমি দেওয়ার কিছুই নেই/ আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলেম তাই’ আউড়িয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

এ সময় আসাম রাইফেলস মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সমবেত মানুষ করতালিতে ফেটে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।