কলকাতা: আবারও ঋণের দায়ে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়। এ নিয়ে রাজ্যে ১৩ জন কৃষক ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হরিপদ রত্ন নামে ওই কৃষকের বাড়ি মালদহের হাবিবপুর থানার আগ্রার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে।
শুক্রবার সকালে নিজের জমির পাশে একটি গাছে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁর বাড়ির লোক।
নিহতের ভাইপো উত্তম রত্ন জানান, কাকার প্রায় ৩০ বিঘা ধানের জমি ছিল। বাড়িতে ১৫০ মন ধান মজুত রয়েছে। সরকার ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করতে নিষেধ করছে না। আবার নিজেও কিনছে না। বাধ্য হয়ে সহায়ক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছিল। কুইন্টাল প্রতি ১ হাজার ৮০ রূপির বদলে (সহায়ক মূল্য) মাত্র ২৫০-৩০০ রুপিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সরকারি নীতির জন্যে চাষের দামও উঠছে না বলে জানিয়েছেন উত্তম। এর ফলে তার কাকার বাজারে প্রায় ৩ লাখ রূপি ধার হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বাড়ির অন্যান্য লোকের কথায়, প্রায় অনেকদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। কাল সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর ফেরেননি। তারপর শুক্রবার সকালে জমির পাশে একটি গাছে গলায় মাফলারের ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে দেখা যায় তাকে। হরিপদ রত্ন’র স্ত্রী ও কন্যাসহ তিন ছেলে রয়েছে।
এদিকে, ঋণের দায়ে এই মৌসুমে ১৩ জন কৃষক আত্মহত্যা করলেন। প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই উঠে এসেছে সহায়ক মূল্য না পাওয়ার কথা। সরকারি নীতির ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ফড়েদের ধান কেনা। মিল মালিকেরাও অতিরিক্ত খরচ বহন করে চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কিনতে যেতে চাইছে না।
কৃষককেই নিজের গাঁটের টাকা খরচা করে মিল মালিকদের থেকে ধান বিক্রি করতে যেতে হচ্ছে। সেখানেও অবশ্য সমস্যা রয়েছে। ফড়েরা ক্রয় করত বস্তার হিসেবে কাটাই ছাড়া। মিল মালিকরা কাটাই হওয়া ধানের ওজনে দাম দিচ্ছে। ফলে এই অতিরিক্ত খরচায় আর চাষের খরচও উঠে আসছে না।
সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও, পয়সা না থাকার অজুহাতে এখনও ধান কিনছে না। ফলে ঋণের দায়ে আত্মহত্যার পথই বেছে নিতে হচ্ছে কৃষকদের। নয় ফিরে যেতে হচ্ছে মহাজনদের কাছে। ফড়ে হটানোর নামে কি দৃঢ় হয়ে বসছে মহাজনী প্রথাই? প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সরকারি নীতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২২ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২