কলকাতা: বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে তিন ভারতীয় জেলেকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় আটক পাঁচ বাংলাদেশি দস্যুকে রোববার আদালতে তোলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার কাকদীপ মহকুমা আদালতে তাদের তোলা হবে।
এই পাঁচ দস্যু গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে লুটপাট করতে গিয়ে ভারতীয় তিন জেলেকে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এরা ঘটনার পর অন্য ভারতীয় জেলেদের হাতে আটক হন। পরে তীরে এনে শনিবার কাকদ্বীপ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কাকদ্বীপের মহকুমা শাসক রাহুল মজুমদার বলেন, এই ঘটনায় কাকদ্বীপ থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃত পাঁচজন জলদস্যুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রোববার তাদের আদালতে তোলা হচ্ছে।
ধৃত পাঁচজন বাংলাদেশি দস্যু হলেন মোহাম্মদ মোস্তাফা, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, জাকির খান, হিরু খান ও বিষ্ণুপদ বিশ্বাস। এদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়।
শনিবার সন্ধ্যায় অবশ্য এদের কাকদ্বীপ থেকে কুলপি থানায় নিয়ে আসা হয়। কাকদ্বীপে জনরোষের কারণে তাদের কুলপি থানায় আনা হয়েছে। সেখানে তাদের জেরা করছে পুলিশ।
দস্যুদের আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুলাল দাস (৪৫), শ্রীফন দাস (২৫) ও মনমোহন দাস (২৫)। এদের বাড়ি কাকদ্বীপ থানার কালীনগর এলাকায়। মৃতদের মধ্যে একই পরিবারের রয়েছেন দু’জন। তারা হলেন দুলাল দাস ও তার পুত্র শ্রীফন দাস।
দস্যুদের আক্রমণে আহত হয়েছেন আরও ৯ জন জেলে। তাদেরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভতি করা হয়। পরে ডায়মন্ডহারবার মহকুমা হাসপাতালে চারজনকে ও কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন কে স্থানান্তরিত করা হয়।
জলদস্যুদের আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন কাকদ্বীপের জেলেরাসহ সাধারণ মানুষজন।
আহত জেলেরা জানান, শুক্রবার সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় কেঁদোদ্বীপে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি দস্যুরা তাদের ওপর বেপরোয়া গুলি চালায়।
জেলেদের আরও অভিযোগ, ‘মা তারা’ ট্রলার নামে একটি ট্রলারসহ ১১ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বাংলাদেশি দস্যুরা।
জানা যায়, গত রোববর সকালে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন জেলেরা। মা বাসন্তী-১ ট্রলারে দুলাল দাস, মা বাসন্তী-২ ট্রলারে শ্রীফন দাসরা গিয়েছিলেন। এছাড়াও মা মঙ্গলচণ্ডী, মা তারা ট্রলার নিয়ে জেলেরা গিয়েছিলেন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। প্রতিটি ট্রলারে ১১-১২ জন জেলে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমানা এলাকার কাছেই কেঁদোদ্বীপে মাছ ধরছিলেন জেলেরা । ২০-২৫ জনের জলদস্যুদের একটি দল জেলেদের ওপর আক্রমণ করে গুলি চালায়। জেলেরাও ঘিরে ধরে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। পাঁচজন জলদস্যুপানিতে ঝাঁপ দেয়। তাদেরকে ধরে ট্রলারে নিয়ে আসে।
এদিকে, খবর পেয়ে কাকদ্বীপে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুইসহ পদস্থ পুলিশ কর্মকতারা।
জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনায় মৃতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতি।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি রোববার সকালে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মৃতদের ছয় লাখ রুপি আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও জখম মৎস্যজীবীদের চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে।
তিনি এদিন আরও বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ জলসীমানা এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে রাজ্যের সমস্ত ট্রলারের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ করে দেবে বলেও তিনি সরকারের উদ্দেশে হুমকি দিয়েছেন।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি সুভাষ সরকার ও সম্পাদক বিজন মাইতি অভিযোগ করে বলেছেন নিরাপত্তার অভাব। বারবার মৎস্যজীবীদের ওপর আক্রমণ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১২