কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুশির্দাবাদ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ভারতীয় কফ সিরাপ ফেনসিডিলের অবৈধ সিন্ডিকেট।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সর্বত্র এই ফেনসিডিলের সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় থাকলেও মুশির্দাবাদের একটি মাত্র থানা এলাকা তদন্ত করলেই বোঝা যায় এই সিন্ডিকেট কতটা সক্রিয়।
এই মুহূর্তে জলঙ্গি থানার অর্ন্তগত সাতটি সক্রিয় ফেনসিডিল সিন্ডিকেট রয়েছে। পুলিশের হাতে ধরার পড়া এই সিন্ডিকেটগুলোর একটির সদস্য ফিরোজ ইসলাম। বাড়ি কান্দিপাড়া। ৪ জানুয়ারি ধরা পড়ে জলঙ্গি থানার পুলিশের হাতে। তার কেস নং-১১/১২ তাং-০৪-০১-১২ ইউ/এস ২০বি এনডিপিএস অ্যাক্ট।
তার গোপন জবানবন্দি থেকেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেও আর্থিক কারণে পড়া শোনা চালাতে না পেরে তিনি এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি জানিয়েছেন, ১. সুকুমার সিন্ডিকেট; এই সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ৫। দলের হোতা সুকুমার সরকার ওরফে বিশ্বাস। বাড়ি জলঙ্গি থানার কাজিপাড়া। এই গ্রুপের আছে কাজিপাড়ার ফজলু শেখ, মামুন শেখ, ও রামচন্দ্রপুরের তাজু শেখ।
২. মামুন সিন্ডিকেট; এর সদস্য সংখা ৪। দলের হোতা মামুন শেখ, বাড়ি খুলু পাড়া কাজি পাড়া, থানা জলঙ্গি। একই গ্রামের গাজু শেখ ও মামুনের ভাই আলম শেখ ও মাহির শেখ বাড়ি বালিবোনা, থানা জলঙ্গি।
৩. ভবেশ সিন্ডিকেট; এই দলের সদস্য সংখ্যা ৩। দলের মাথা ভবেশ সরকারের বাড়ি কান্দিপাড়া, ধনিরামপুর, থানা জলঙ্গি। অন্যরা কালাম শেখ বাড়ি বালিবোনা আর আজাহার শেখের বাড়ি ধোবাপাড়া।
৪. কায়ুম সিন্ডিকেট; এর সদস্য সংখ্যা ৫। দলের নেতা কায়ুম শেখ বাড়ি ধনিরামপুর, সিনাহা শেখ বাড়ি বালিবোনা, পার্টনার বাড়ি শেখর পাড়া, তরুণ সরকার ওরফে ওলি ওরফে আলি হোসেন সর্ম্পকে কায়ুমের ভাই।
৫. নুরুল সিন্ডিকেট; দলের হোতা নুরুল ইসলামের বয়স ৫০। বাড়ি ধনিরামপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়াও এনামুল বাড়ি জলঙ্গি বাজার কাস্টমস রোডের বিপরীতে। মিজারুল নামে দুই সদস্যর নাম পাওয়া যায়।
৬. বাবু সিন্ডিকেট; এই দলের হোতা বাবু ওরফে জয়ন্ত সরকারের বাড়ি সাগরপাড়া, মন্টু মণ্ডল বাড়ি সাহেবনগর বাজার এবং মন্টুর ভাই সাইফুল শেখ।
৭. হাফিজুল সিন্ডিকেট; এটি অন্য সিন্ডিকেটগুলোর থেকে অনেক বেশি সক্রিয় ও আকারে বড়। এই দলের সদস্য সংখ্যা ৮। এর মূল হোতা হাফিজুল শেখ বাড়ি কানাপাড়া। এনামুল শেখ ও আব্বাস শেখ বাড়ি কান্দিপাড়া, জাকির শেখ, সফিকুল শেখ, সেন্টু শেখ, সালাম শেখ ও রশিদ মন্ডলের বাড়ি কান্দিপাড়ায়।
এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কার্যত পুলিশের নাকের ডগায় বসে এই চলছে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা যা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
ফিরোজ ইসলাম আরও জানিয়েছে, তাদের সিন্ডিকেটে ১০ জনের দল ছিল। নুরুল ইসলাম এবং ওলি ওরফে আলি হোসেনের স্টকিস্ট এবং সাপ্লায়ারের হয়ে তিনি কাজ শুরু করেন ২০০৮ সালে।
তার দাবি, গত বছর রাজ্যের আবগারি দফতর হাফিজুল নামে অপর এক সিন্ডিকেটের বেশ কয়েক শিশি ফেনসিডিল আটক করে। তারপর থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর তার ওপর হামলা করে হাফিজুল সিন্ডিকেট। সেই সময় মিলন নামে এক সিন্ডিকেট সদস্যের স্ত্রী হামলায় মারা যায়।
ফিরোজের অভিযোগ, তারা একটি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিকদলের নেতাদের সঙ্গে আপস করতে চাইলেও নেতারা রাজি হয়নি। এর মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর আরেকটি সংর্ঘষে মহবুল নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়।
ফিরোজ জানিয়েছে, বছর শুরুতেই তাদের সঙ্গে আরডি পার্টির সংর্ঘষ হয়। ওই আরডি পার্টি বিএসএফের ইনর্ফমার হিসাবে কাজ করা ছাড়া অন্য দলের বাজেয়াপ্ত মালপত্র নিয়ে নেয়।
তবে সিন্ডিকেটর সঙ্গে কত অস্ত্র ও বিস্ফোরক আছে তা বলতে চায়নি ফিরোজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১২